ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৭ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৯
গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এর পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।

নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে রোববার (০৫ মে) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে বিকেলে নগরীর বিএমএ ভবনের কাজী আজহারুল হক মিলনায়তনে শহীদ স্মৃতি স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র।

‘সাম্প্রদায়িকতা থেকে জঙ্গিবাদ: ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য কবি আসাদ মান্নান। আর অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন।  

স্মারক বক্তৃতায় খুবি উপাচার্য বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যে সাম্প্রদায়িক শক্তি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল তারাই পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো আদর্শের পূজারি ছিল। মাওলানা ভাসানীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হুকুমতে রব্বানী এবং জাসদের মতো শক্তিও সাম্প্রদায়িকতাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। ’ 

‘আপাতদৃষ্টিতে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে  পরাজিত মনে হলেও তাদের তৎপরতা বাংলাদেশে থেমে নেই। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, রমনার বটমূলে হামলা, ৫০টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা কিংবা ২১ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্ঠার পেছনেও রয়েছে এই সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীর অপতৎপরতা। ’

এ সময় তিনি জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে দমনে মাধ্যমে মানব ধর্ম ও মানবতার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়নি কারণ এ দেশে গণহত্যা নিয়ে অপরাজনীতি হয়েছে। এই অপরাজনীতি বন্ধ করতে এই আর্কাইভ ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।  

‘কেবল দমন করে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও প্রশাসন যদি ধর্মান্ধদের সঙ্গে সমঝোতা বন্ধ না করে, নতুন প্রজন্মকে যদি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় তাহলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এ দেশ থেকে কখনও দূরীভূত হবে না।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ৫ বছরে গণহত্যা  জাদুঘরের অধীনে বিভিন্ন বধ্যভূমিতে ৩০ টি স্মৃতিফলক, ৩০ জেলায় গণহত্যা জরিপ, ৮০টি গণহত্যা নির্ঘণ্ট প্রকাশ ও ৩০০ জন গবেষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়া আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার ছবি, ৬ হাজার গ্রন্থ এবং দুষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকা রক্ষিত রয়েছে। এই জাদুঘরই প্রথম ডিজিটাল জেনোসাইড ম্যাপ তৈরি করেছে। এসব ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।  

এরই মধ্যে জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শঙ্কর মল্লিক।

উল্লেখ, ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনা মহানগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা,  মে ০৫,  ২০১৯
এমআরএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।