বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় ওয়াগনগুলো লাইনচ্যুত হওয়ার পর রাত থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হয়। তবে রাতে বৃষ্টি ও আলো স্বল্পতার কারণে লাইনচ্যুত ওয়াগনগুলো উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, তেলবাহী ট্রেনের আটটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হওয়ার সঠিক কারণ এখনো বের করা যায়নি। তবে এজন্য গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা তা জানা যাবে।
তিনি বলেন, বুধবার রাত থেকে ক্রেনের সাহায্যে লাইনচ্যুত ওয়াগনলোকে শূন্যে উঠিয়ে লাইনে নিয়ে স্থাপন করা হচ্ছে। তার আগে ভেঙে যাওয়া রেললাইনগুলো কেটে সরিয়ে দিয়ে নতুন লাইন প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। অনেক স্থানে পুরোনো ও দুর্বল স্লিপার সরিয়ে নতুন স্লিপারও বসাতে হচ্ছে। এতে লাইনচ্যুত তেলবাহী ট্রেনের ওয়াগনগুলোর উদ্ধার কাজে বেশি সময় লাগছে।
এর ওপর বুধবার রাতজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত চারটি তেলবাহী ওয়াগন উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অন্য চারটি ওয়াগন উদ্ধারে কতো সময় লাগবে তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা এখনো বাতিল করা হয়নি। আশা করা যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
এদিকে, প্রধান প্রকৌশলী ছাড়াও বর্তমানে প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার, রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন। বাড়তি জনবল নিয়ে ঘটনাস্থলে থেকে তারা উদ্ধার কাজের তদারকি করছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, চারঘাটের হলিদাগাছিতে লাইনচ্যুত ওয়াগনগুলোর উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি। যে কারণে রাজশাহী থেকে বৃহস্পতিবার সকালে আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা, সাগরদাঁড়ি, সিল্কসিটি, কপোতাক্ষ ও বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। টিকিট ফেরত নিয়ে যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তারা ২৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে হাতে আর নগদ টাকা নেই। তাই টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীদের পরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
এর আগে বুধবার রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ইশ্বরদীগামী কমিউটার ট্রেনও ছেড়ে যেতে পারেনি।
এছাড়া বুধবার দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি নাটোরের আবদুলপুরে এবং বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহীর আড়ানিতে আটকা পড়ে আছে। এতে পুরো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর চারঘাট হলিদাগাছির দিঘলকান্দি ঢালানের কাছে তেলবাহী ট্রেনের আটটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তেলবাহী ওই ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহীর হরিয়ানের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ঈশ্বরদী হয়ে রাজশাহী অভিমুখে যাচ্ছিল। পথে হলিদাগাছিতে লাইনচ্যুত হয়।
ট্রেনটির মাঝখান থেকে বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়। তাই আটটি বগি রেখে সামনের অন্য বগিগুলো নিয়ে তেলবাহী ট্রেনটি বুধবার রাতেই রাজশাহীর হরিয়ান রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। রাত পৌনে ১০টার দিকে রিলিফ ট্রেন সেখানে পৌঁছে। তবে বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ শুরু করতে দেরি হয়।
ঘটনার পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় ট্রান্সপোর্ট অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ কমিটিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৯
এসএস/আরবি/