গত এক মাসের ভাঙনে চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ডা. ওবায়েদুল হকের বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। তার বাড়ির সামনের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাঁ, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পারিবারিক কবরস্থান এখন ভাঙনের মুখে।
রোববার (১৪ জুলাই) ভাঙন কবলিত ফলকন ইউনিনেয়র লুধূয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাঘা পরিবারের লোকজনসহ আশপাশের বাসিন্দারা বাঁশ ও গাছের খুঁটি দিয়ে বেড়া তৈরি করেন। বেড়ার ভেতর দিয়েছেন ঝোপ-জঙ্গল। এছাড়া জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীর পাড়ে স্থাপন করছেন। গত দুই সপ্তাহে এভাবে প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ তৈরি করেছেন তারা।
স্থানীয়রা বলছেন, জংলাবাঁধের কারণে নদীর ঢেউ পাড়ে সরাসরি আঘাত করতে পারবে না। এতে ভাঙন কিছুটা হলেও প্রতিরোধ হবে। এভাবে বর্ষা মৌসুম পার করতে পারলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা।
বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ এ জনপদের মানুষকে তাড়া করছে মেঘনা। এক এক পরিবার পাঁচ/সাতবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখন এখানকার হাজার হাজার পরিবার নদী ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভিটেমাটি রক্ষায় তারা জংলাবাঁধ দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কমলনগরের বাসিন্দারা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়েছেন। দাবির মুখে, গত বছর সরকারিভাবে এক কিলোমিটার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হয়। মাত্র এক কিলোমিটার বাঁধ কমলনগরের নদী ভাঙন প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন আরো আট কিলোমিটার।
এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ শেষে বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে অব্যাহত ভাঙনে ওইটুকু বাঁধে দেড় বছরে ধস নেমেছে অন্তত ১০ বার। এছাড়া ভাঙনে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, মসজিদ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। বর্তমানে মারাত্মক হুমকির মুখে হাজার হাজার পরিবার ও সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। উপায়ান্তর না পেয়ে এখন তারা নিজেরাই নিজেদের বসতভিটা ও বিদ্যালয় রক্ষায় জংগলাবাঁধ দিচ্ছেন।
জংলাবাঁধের উদ্যোক্তা লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বাঘা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা ও ঘরবাড়ি রক্ষায় জংলাবাঁধের উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। ব্যক্তিগত টাকায় এ বাঁধ না দিলে এতোদিনে প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাঁ, মসজিদ-মাদ্রাসা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পারিবারিক কবরস্থানসহ আশপাশের স্থাপনাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যতো। আশা করছি, জংলাবাঁধে সুফল আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
এসআর/আরবি/