ঢাকা, সোমবার, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০২ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

ইঁদুরের হানায় ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
ইঁদুরের হানায় ঝুঁকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ! বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: ‘ইঁদুর-চিকার মারামারি, নষ্ট করে বাসা-বাড়ি, ওষুধ কেনেন তাড়াতাড়ি। ময়নার মায়ের ঘুম নেই। ইঁদুর তর বাঁচন নেই। ধরা পড়লে জামিন নেই’- ছন্দময় এসব কথার জালে এখনও ধরাশায়ী সাধারণ মানুষ।

হকারদের এসব জাদুকরি কথায় আকৃষ্ট হয়ে সবকিছু ভুলে যান সহজ সরল মানুষগুলো। কিনে ফেলেন ইঁদুর মারার ওষুধ।

কিন্তু এসব ওষুধে কতোটুকু কাজ হয়, তা শুধু হকাররাই জানেন।

যদিও ইঁদুরের দৌড়ঝাপ কমেনি। বেড়েই চলছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষতির মাত্রাও। এমনকি এই ইঁদুরের হানায় এক রকম ঝুঁকিতে রয়েছে বগুড়ার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। ইঁদুরের করা গর্তের কারণে বাঁধটির অনেক স্থান এখন দুর্বল। একটু একটু করে গর্ত দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

এতে বাঁধ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেওয়া মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতো মানুষের নিরাপদ আশ্রয় কোথায় মিলবে- এমন প্রশ্ন রাখেন অনেক বানভাসি মানুষ।
 
তবে বানভাসিদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরো অংশ তাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার হচ্ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, যমুনা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

তবে বাঁধে ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি ঢুকলেও বানভাসিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।

বাঁধের দক্ষিণে বগুড়ার ধুনট উপজেলা। উত্তরে সোনাতলা এবং মাঝে সারিয়াকান্দি উপজেলার অবস্থান। এই তিন উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে হিংস্র যমুনা বহমান। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলার পূর্বাংশের অসংখ্য জনপদ সময়ের ব্যবধানে চলে গেছে হিংস্র যমুনার পেটে। সেই ‍যমুনার ভয়ঙ্কর থাবা থেকে রক্ষায় এই তিন উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়েই ৪৫ কিলোমিটার বহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (বিআরই) নির্মাণ করা হয়েছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় ক্রমেই যমুনা আরও হিংস্র হয়ে ‍উঠছে। বিপদসীমা অতিক্রম করায় তীব্র গতির সেই পানি বাঁধের পূর্বাংশের গোড়া থেকে মাঝ বরাবর প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা মারছে। কোথাও কোথাও পানি ঘূর্ণন আকারে আঘাত হানছে। ক্রমেই বেড়ে চলছে ধাক্কা আর আঘাতের মাত্রা।

এতে ইঁদুরের সৃষ্ট গর্ত হয়ে একাধিক পয়েন্টে পানি চলে আসছে বাঁধের পশ্চিমপ্রান্তে। আবার কোনো কোনো স্থানে পানির সঙ্গে বালুও আসছে। বালু আসায় সৃষ্ট গর্ত সময়ের ব্যবধানে ফুটোয় পরিণত হতে পারে। আর এ রকমটা হলে সেটা বাঁধের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বাংলানিউজকে আরও বলেন, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত থেকে ঈঁদুরের গর্তের কারণে বাঁধের কিছু কিছু স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে।

তিনি এও বলেন, বাঁধে পানি তীব্র জোরে আঘাত হানছে। এছাড়া বাঁধের একপ্রান্ত হয়ে আরেকপ্রান্তে স্বচ্ছ পানি বের হলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পানির সঙ্গে বালু বের হলে সমস্যা। কারণ সেখানে একটি সময় ফুটোর সৃষ্টি হতে পারে। যদিও পানির সঙ্গে বালু বের হওয়াটা এখনও দেখা যায়নি।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ইঁদুরের গর্তের কারণে বেশ কয়েক স্থানে পানি বের হচ্ছে। তারপরও এখনও বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত। এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। কেননা, বাঁধের পুরো অংশ সার্বক্ষণিক আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

এছাড়া বাঁধের যেসব স্থান দিয়ে পানি বের হচ্ছে, তা বন্ধ করতে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুর করা হয়েছে বলে যোগ করেন হাসান মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমবিএইচ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।