ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বস্তি ফিরেছে রাতের ধূমকেতুতে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
স্বস্তি ফিরেছে রাতের ধূমকেতুতে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকাগামী ধূমকেতু ট্রেন থেকে: ঘড়ির কাঁটায় রাত ১১টা ২০ মিনিট। সময়টি রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের। চার নম্বর প্লাটফর্ম থেকে ঠিক সময়েই ছাড়লো ট্রেনটি। অথচ মাত্র ক’দিন আগেই ভেঙে পড়েছিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সব ট্রেনের শিডিউল। যাত্রীদের যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এ নিয়ে। তবে, শেষ পর্যন্ত শিডিউল বিপর্যয়ের সে ধকল কাটিয়ে উঠেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ধূমকেতু ট্রেনটি ডুয়েল গেজের ওপর ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুঁটছে। মনে হচ্ছে, গতি কম হলেও মন্দ কী? হেলেদুলে ট্রেনের এ ছুঁটে চলা উপভোগ করছেন অনেকেই।

কামরার যাত্রীদের যেন একরকম ঘুম পাড়ানোর কাজই করছে ডান-বায়ের হালকা এ ঝাঁকুনি।  

ট্রেনের মধ্যে সারাদিনের ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মানুষগুলো ঘুমাচ্ছেন আরামসে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় তো আরও আরাম। সেখানে অনেকে চাদর মুড়ি দিয়েই হারিয়ে গেছেন ঘুমের রাজ্যে। এমন মুহূর্তে আজেবাজে চিন্তা বা আতঙ্কের ছাপ নেই কারও চোখে-মুখে। অন্যদের এমন প্রশান্তির ঘুম দেখে চোখও আরাম পায় বটে।  

টের পাচ্ছিলাম, সড়কে এত বিলাসবহুল বাস থাকতে এখনো কেন মানুষ ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। এত দুর্ভোগের পরও মৃত্যুর মিছিল থেকে বাঁচতে এখনো কেন যাত্রাপথে ট্রেনের ওপরই ভরসা তাদের।  

কথা হয় ধূমকেতু ট্রেনের ‘ঘ’ বগির যাত্রী আসিফ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যে যা-ই বলুক, আর যে দুর্ভোগই থাকুক, এখনো নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ট্রেনের জুড়ি নেই। তবে, এ নির্ভরতা ধরে রাখার জন্য রেললাইন সংস্কার, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু মেরামত, সর্বপরি ট্রেনের সেবার মান বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সাইফুল আলম নামে ‘ক’ বগির আরেক যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, প্রায়ই এমন হয় যে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির মধ্যেও টিকিট ছাড়া মানুষ ঢুকে পড়েন। তারা সিটের যাত্রীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান। দীর্ঘ পথ মাথার ওপর খড়গ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই। এতে নারীরা বেশি বিব্রত হন।  

সাধারণ বগিতে স্ট্যান্ডিং টিকিট বন্ধ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার নিয়ম চালুর দাবিও জানান ঢাকাগামী নৈশকালীন এ যাত্রী।  

এদিকে, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছিতে গত ১১ জুলাই ফার্নেস অয়েলবাহী আটটি ট্যাংকার ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। পরে সেগুলো রিলিফ ট্রেন দিয়ে উদ্ধার করা হয়। লাইনচ্যুত হওয়ার ২৮ ঘণ্টা পর আবার সচল হয় রাজশাহী-ঢাকা রেলপথ। তবে, দুর্ঘটনার কারণে পুরো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শিডিউল ভেঙে পড়ে, যা স্বাভাবিক হতে প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লেগে যায়।  

‘বর্তমানে সঠিক সময়েই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আন্তঃনগর, লোকাল/মেইল ও শাটল ট্রেন চলছে। তবে মাঝে-মধ্যে সকালের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রায় বিলম্ব ঘটছে। ’

জানতে চাইলে ধূমকেতু আন্তঃনগর ট্রেনের টিটিই (ট্রেন টিকিট ইন্সপেক্টর) সাহেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানালেন, রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোরে সঠিক সময়েই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। রাতের ট্রেনটি সবগুলো স্টপেজে বিরতি দিলেও ইশ্বরদী বাইপাস, গাজীপুরের মির্জাপুর ও টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়ায় না।  

বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে মোট তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু আছে। এগুলো হলো- পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। শুরুতে এসব ট্রেন যে ক’টি স্টেশনে থামতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি স্থানে থামছে। বর্তমানে ১৪টি স্টপেজ রয়েছে এ আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর। গত ২৫ এপ্রিল থেকে যাত্রা শুরু করেছে বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস। কিন্তু লাভের অংক শূন্য! চালু হওয়ার পরপরই নিজের ‘বিরতিহীন’ অলঙ্কার হারাতে বসেছে বনলতা। এ রুটের অন্য ট্রেনগুলোতে এখন ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এসএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।