ঢাকা, বুধবার, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘স্কুলগুলো কারাগার, কোচিং সেন্টার কনডেম সেল’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৯
‘স্কুলগুলো কারাগার, কোচিং সেন্টার কনডেম সেল’

ঢাকা: পরিবার হল এই প্রজন্মের জন্য খাঁচা, স্কুলগুলো কারাগার, আর কোচিং সেন্টারগুলো হল কনডেম সেল- এমন মন্তব্য করলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
 

বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এই শিক্ষাবিদ।
 
প্রধান অতিথি শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসোইন ছাড়াও প্রখ্যাত কয়েকজন শিক্ষাবিদ ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।


 
সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পরিবার হল এই প্রজন্মের জন্য খাঁচা, স্কুলগুলো হল কারাগার, আর কোচিং সেন্টারগুলো হল কনডেম সেল।
 
শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্বির প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ভালো শিক্ষক না হলে ভালো শিক্ষা পাওয়া যাবে না। এজন্য শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো চালু করার দাবিও জানাচ্ছি।
 
অনুষ্ঠানে লেখক ও কলামিস্ট আবুল মোমেন বলেন, আমরা সবাই সরকারকে দোষারোপ করি কিন্তু সরকার তো সমাজেরই প্রতিফলন। রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সমাজ পিছিয়ে গেছে। সমাজে ধর্মান্ধতার প্রসার ঘটেছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পারটিসিপেটরি না, যুক্তিবাদী না, শিক্ষকেরা অধিকাংশই আউটডেটেড।
 
বিশেষ অতিথি সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, পিইসি (প্রাথমিক সমাপনী) ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতির বিকল্প চিন্তা করছে সরকার।  

অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক বইয়ের সংখ্যা  খুব বেশি না। কিছু স্কুল সরকার কতৃক নির্ধারিত বইয়ের বাইরেও আরো কিছু বই পড়ায়। এর পেছনে বাণিজ্য আছে।  
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনই বাংলাদেশের সংবিধান ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে আপোষ করবে না। বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি অবশ্যই পরাজিত হবে।  

প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন  গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
 
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল ও মানবিক পাঠ্যবই চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম।
 
অন্যান্যদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য মশিউজ্জান, উদীচীর সভাপতি শফীউদ্দিন, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
 
সভায় মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয় দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারমুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম ও মানবাধিকারের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষানীতি এবং তার আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
 
সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে সুকৌশলে যে চক্রান্তের ফলে পাঠ্য বই পরিবর্তন করা হয়েছিল তা চিহ্নিত করার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন।
 
বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, জেন্ডার সংবেদনশীল, অন্ধবিশ্বাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যসূচির পরিবর্তন করতে হবে ও সেখানে সঠিকভাবে পাঠদান করা হচ্ছে সেই বিষয়ে সরকারকে মনিটরিং করতে হবে।
 
কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি বিষয়ে সরকারকে আরও সক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণ এবং তাদের বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার আওতায় আনতে হবে, যাতে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।
 
সাম্প্রদায়িক শক্তির যেকোনো অপতৎপরতা প্রতিরোধে সরকার ও সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে তৎপর এবং অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু সংস্কৃতি-চর্চা, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৯
এমআইএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।