ঢাকা, বুধবার, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বানের পানিতে ভাসলো তাঁতী ছামানের স্বপ্ন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৯
বানের পানিতে ভাসলো তাঁতী ছামানের স্বপ্ন নষ্ট তাঁতের সামনে অসহায় ছামান আলী। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: মাত্র দু’বছর আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নিজ বাড়ির পাশে চারটি তাঁতের একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছিলেন ষাট বছর বয়সী ছামান আলী আকন্দ। স্ত্রী আর তিন ছেলেকে নিয়ে নিজেরাই শ্রমিকের কাজ করতেন। এখান থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে দিনরাত শ্রম দিতেন পরিবারের সবাই। 

তাদের ইচ্ছা ছিল অন্যের ফ্যাক্টরিতে নয় নিজের কারখানা কাজ করে স্বপ্নকে আরও বড় করার। প্রয়োজনে আরও শ্রমিক খাটিয়ে ক্ষুদ্র থেকে বড় তাঁত ব্যবসায়ী হবেন ছামান আলী।

এমনটাই স্বপ্ন ছিল তার।

কিন্তু ভয়াবহ বন্যার পানির প্রবল স্রোতে মুহূর্তেই ছামান আলীর স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেসে গেলো তার দু’টি তাঁত। আরও একটি তাঁত হয়ে গেছে নষ্ট। ঘরে থাকা রঙ, সুতাসহ তাঁতশিল্পের সব সামগ্রী ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের সয়দাবাদ মধ্যপাড়ায় সরেজমিনে ছামান আলীর বাড়ি গিয়ে ধ্বংসস্তূপের মত পড়ে থাকা ছামান আলীর তাঁত ফ্যাক্টরি দেখা যায়।

এ সময় কথা হয় ছামান আলী আকন্দের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাবা-মা হতদরিদ্র ছিলেন। তাই জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তিনি তাঁতের কাপড় তৈরির কাজ শিখেছেন। দীর্ঘদিন অন্যের ফ্যাক্টরিতে তাঁত শ্রমিকের কাজ করেছেন। মাঝখানে বেশ কয়েক বছর রঙের ব্যবসাও করছিলেন। বছর দু’য়েক আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নিজের বাড়ির পাশে চারটি তাঁতের একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন। পরিবার নিয়ে নিজেরাই শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঋণের টাকা পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে বানের পানির ভয়াবহ স্রোত তার সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

বন্যার পানি ঢুকেছে তাঁত কারখানায়।  ছবি: বাংলানিউজ

সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ছামান আলী বলেন, প্রায় ১৫/১৬ দিন আগের কথা। বাড়ির পূর্বপাশেই যমুনা নদীর বিশাল ক্যানেল। পুরো ক্যানেলটা বানের পানিতে থই থই করছিল। তবে পানি বাড়ছিল খুব ধীরে ধীরেই। পানি বাড়ার অবস্থা দেখে তাঁতসহ আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল। ঘটনার দিন ভোর থেকে আমরা ফ্যাক্টরিতে কাপড় তৈরির কাজ করছিলাম। দুপুরের দিকে ফ্যাক্টরি থেকে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার জন্য যাই। হঠাৎ করেই যমুনার ক্যানেল থেকে তীব্র স্রোত আসতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে সামনের সড়কটি ভেঙে আমার ফ্যাক্টরি ও বাড়ির ভেতর দিয়ে স্রোত গড়াতে থাকে। ওইসময় বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যাই। মুহূর্তের মধ্যে আধাপাকা তাঁতঘরের সামনের অংশ ধসে যায়। দু’টি তাঁত পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়েছে। নষ্ট হয় আরও একটি তাঁত। বাড়িতে থাকা রং, সুতাসহ যাবতীয় আসবাবপত্র বানের পানির সঙ্গে চলে যায়।

হতাশার সঙ্গে তিনি বলেন, এখন আমি সর্বস্বান্ত। ঋণের টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা সংসার চালানোর সাধ্যও আমার নেই। ঋণের দায়ে এখন বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে, নয়তো আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় দেখছি না।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, এক মুহূর্তেই ছামান আলীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি এখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব একজন তাঁতী। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এ প্রান্তিক তাঁতীকে পুনর্বাসন করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।