শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরের দিকে সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলেছে। এ নিয়ে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ জনে।
অপরদিকে গত দু’দিনে পৌর এলাকা ও শহরতলীর বেশ কয়েকটি স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে এডিস মশার লার্ভা ও পূর্ণাঙ্গ মশা পেয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অ্যান্টোমোলজি টেকনিশিয়ানরা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অ্যান্টোমোলজি টেকনেশিয়ান তোফাজ্জল হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পৌরসভা ক্যাম্পাসে স্তুপ আকারে থাকা গাড়ির চাকার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া গেছে। সার্কিট হাউসে পুলিশ সুপারের বাসভবনে ফুলের টবে, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসা ও জেলা পরিষদের ডাক-বাংলাসহ আরও করেকটি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে পূর্ণবয়স্ক মশার সন্ধানও মিলেছে। এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, এডিস মশার লার্ভা শহরের বিভিন্ন স্থানেই রয়েছে।
এদিকে সংবাদ মাধ্যমে এডিস মশা ও লার্ভার খোঁজ পাওয়ার খবরে শহর জুড়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে আতংক শুরু হয়েছে। খেটে খাওয়া শ্রমিক থেকে শুরু করে শহরে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ও কয়েলের দোকানে ছুটছেন।
কথা হয় রিকশা শ্রমিক হাবিব, শফিকুল, আজিজল, অটোরিকশা চালক মোস্তফা, মামুন, ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, বাছেদুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, আগে শুনেছি ঢাকা ছাড়া অন্য কোথায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব নেই। কিন্তু এবার শুনছি সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী আসছে। আবার ডেঙ্গু মশার ডিমও নাকি পাওয়া গেছে। আমাদের পরিবারে লোকজনের মাঝেও ভয় শুরু হয়েছে। শহরের আবর্জনা পরিস্কার ও মশা নিধনের দাবি জানান বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এসব মানুষ।
সিরাজগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ গৌর বলেন, শহরজুড়ে সব মানুষের মধ্যেই ডেঙ্গু আতংক বিরাজ করছে। পৌর এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে রাস্তার সংস্কার কাজের জন্য সৃষ্ট গর্তে পানি জমে রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনার স্তুপ জমে রয়েছে। এতে করে এডিস মশার বংশবিস্তার হবে। এসব কারণে শঙ্কা আরও বাড়ছে।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. জহুরুল হক রাজা বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভা ও স্বাস্থ্যবিভাগের কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে এ শহরে ডেঙ্গু রোগ মহামারি রূপ নিতে পারে।
সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম এডিস মশা ও লার্ভার সন্ধান পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মশার ডিম থেকে লার্ভার সৃষ্টি হয়। লার্ভার পর তিনটি ধাপে ৮-৯ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপ নেয়। মশা নিধনে শুধু ওষুধ দিলে হবে না সবাইকে সচেতন হতে হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে লিফলেট, ব্যানার, প্রচার মিছিল এবং বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে গিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার সরকারি মূল্য ৫০০ টাকা নেওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা বলেন, আমরা প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করে মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগ করছি। আমাদের তিনটি বড় স্প্রে মেশিন ছিল। দু’দিন আগে আরও ৫টি আনা হয়েছে। গতকাল থেকে ১০ জন কর্মচারী নিয়োগ করে নিয়মিত স্প্রে করানো হচ্ছে। শুধু স্প্রে করেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ফুলের টব, বাড়ির আঙিনা সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
এসএইচ