তখন হায়দারের চাচা আব্দুল গফুর বাদী হয়ে একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন শাহীনসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেফতারের পর দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান শাহীন।
কিন্তু শাহীন কারামুক্ত হওয়ায় দীর্ঘ সাত বছর আগের সেই শত্রুতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বাদীপক্ষের মধ্যে। এই শত্রুতার বশে গত বুধবার (৩১ জুলাই) গভীর রাতে হায়দার আলীর চাচা মামলার বাদী আব্দুল গফুর ও তার স্বজনরা শাহীনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ভোরে শাহীনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) শাহীনের বাবা শামছুল হক বাদী হয়ে নন্দীগ্রাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হায়দার আলী হত্যার মামলার বাদী আব্দুল গফুরসহ তার পরিবারের নয় জনকে আসামি করা হয়।
এই ঘটনার রেশ না কাটতেই আগের ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আব্দুল গফুরের জামাতা আব্দুল সালামের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন যুবক শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় উপজেলার বর্ষণ চেচুয়াপাড়ার বাজার এলাকায় যান। পাশাপাশি হায়দার হত্যা মামলার অন্য আসামিদের খুঁজতে থাকেন।
তাদের ঘোরাঘুরিতে বাজারের লোকজন নড়েচড়ে বসলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একটি চায়ের দোকান লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে বসেন সালাম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এতে চা-দোকানী বর্ষণ চেচুয়াপাড়ার বুলু মিয়ার ছেলে জামাল উদ্দিনের (৩৫) পেটে ও তার দোকানে বসে থাকা একইগ্রামের মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে পুটু মিয়া (৪২) উরুতে গুলি লাগে।
গুলিবিদ্ধ এই দুই ব্যক্তি মামলার বাদী বা বিবাদী পক্ষের কেউ নন। এমনকি তাদের সঙ্গে এই দুই ব্যক্তির আত্মীয়তারও কোনো সম্পর্ক নেই।
গুলির পরপরই বাজারের লোকজনের চিৎকারে সবাই একজোট হয়ে আব্দুস সালামকে পিস্তুলসহ ও সবুজ নামের একজনকে মোটরসাইকেলসহ ধরে ফেলে। তবে অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দু’জনকে আটক করে এবং আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। অবশ্য পুলিশ আসার আগেই উত্তেজিত লোকজন মোটরসাইকেলটি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।
পরে আব্দুস সালামসহ দুইজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এ নিয়ে আগের মামলার বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মামলা হয়। তারপর শুরু হয় হয় আরও একটি মামলার প্রক্রিয়া।
এসব ঘটনায় শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে আব্দুল গফুরসহ তার স্বজনদের চারটি পরিবার বাড়িছাড়া হয়েছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির বাংলানিউজকে জানান, বর্ষণ চেচুয়াপাড়া এলাকায় যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া জামাল উদ্দিন ও পুটু মিয়া গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এমবিএইচ/এইচএ/