সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ওই তিন ছাত্র এ জবানবন্দি দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
গত ২৪ জুলাই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবির হুসাইনের মুণ্ডবিহীন মরদেহ উদ্ধার হয়। মাদ্রাসার অদূরের একটি আমবাগানের মধ্য থেকে তার মরদেহটি উদ্ধারের দুই দিন পর একটি পুকুরে মুণ্ডও পায় পুলিশ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ ও শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতারকৃতদের গত ৩০ জুলাই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল খালেক জানান, রোববার (৪ আগস্ট) রাতে মাদ্রাসার ছাত্র সদর উপজেলার হানুড়বাড়াদী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে আনিসুজ্জামান, টেইপুর গ্রামের আব্দুল হাই কাতুর ছেলে ছালিমির হোসেন, আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আবু হানিফ রাতুল, মামুন হোসেনের ছেলে আব্দুর নুর ও বলদিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মুনায়েম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আবির হুসাইনকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
পরে সোমবার রাত ৯টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গ্রেফতারকৃত পাঁচ মাদ্রাসা ছাত্রকে চুয়াডাঙ্গার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোর্পদ করে পুলিশ। তখন পাঁচজনের মধ্যে আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল আদালতের বিচারক সাজেদুর রহমানের কাছে জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দিতে তারা দাবি করে, দীর্ঘদন ধরে মাদ্রাসার শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিলেন। মারধরের পাশাপাশি ছাত্রদের দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করাতেন এবং ঠিকমত খেতেও দিতেন না তামিম। এসব বিষয়ে ছাত্ররা প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ানো হতো। এর জের ধরে শিক্ষক তামিম বিন ইউসুফকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্ররা। পরে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। কারণ আবিরকে গ্রাম থেকে তামিম বিন ইউসুফ মাদ্রাসায় নিয়ে আসায় ওই ছাত্রের দায়ভার তার ছিল।
ওই তিন ছাত্র জবানবন্দিতে বলে, ‘সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে আমরা পাঁচ জন মিলে আবিরের সঙ্গে গল্প করতে করতে তাকে মাদ্রাসার পাশে আমবাগানে নিয়ে যাই। এরপর তাকে (আবিরকে) বলাৎকার করা হয়। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করি। হত্যার পর গুজব ছড়াতে আবিরের মাথা শরীর থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ছালিমির হোসেন। পরে মাথাটি পাশের পুকুরে ফেলে দেই। এরপর আমরা মাদ্রাসাতে ফিরে যাই। ’
তিন ছাত্রের জবানবন্দি শেষে আদালতের বিচারক তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৯
এইচএ/