চা বাগানে দিগন্ত বিস্তৃত চা-পাতা থাকলে তার ভেতর অবশ্যই থাকতে হবে ‘ছায়াতরু’ (শেডট্রি) বা ‘ছায়াবৃক্ষ’। এটি বাধ্যতামূলক।
চা বাগানের সেকশনে (এলাকা) চা-পাতার পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য ছায়াবৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি চা গাছের অতিরিক্ত রৌদ্রের তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়। এর পাশাপাশি চা-বাগানের পরিবেশ ও তাপমাত্রা সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখে। এ ছায়াতরুগুলো বড় হয়ে প্রতিটি চা গাছকে প্রায় ৭০ শতাংশ ছায়া দান করে থাকে। তাতে বাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বুধবার (৭ জুলাই) সকালটা চমৎকার হয়ে ধরা পড়লো। দেখা গেলো, ভাড়াউড়া চা বাগানের শিশুবৃক্ষের রোপণ সদ্য সম্পন্ন হয়েছে। এখন বৃক্ষশিশুরা প্রাবীণবৃক্ষের পাশে সকাতারে মিলিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এ যেন নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন!
তবে মজার ব্যাপার হলো, সেই ছায়াবৃক্ষদের ওপরে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পলিথিনের ছেড়া অংশ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ যেন অনস্বীকার্য। অবশ্যম্ভাবী ফলাফলের অংশবিশেষ। অসংখ্য শিশুবৃক্ষদের ‘নতুন নিশান’ হয়ে বাতাসে উড়ছে ভাবলেশহীন। চোখ মেললেই ফুটে ওঠে সবুজের বন্যায় সাদা সাদা টুকরো নিশান।
এগিয়ে আসা এক চা-শ্রমিক সর্দার নতুন লাগানো এ গাছগুলো সম্পর্কে বলেন, এগুলো মাত্র লাগানো হয়েছে। বছর দু’তিনের মধ্যেই এগুলো বড় হয়ে চা গাছে ছায়া দেবে। ছায়া পেলে বাড়বে চা পাতার উৎপাদন।
এখন তো রোদের তাপ খুব বেশি। আমাদের শরীরে লাগলেই মনে হয় চামড়া যেন পুড়ে যাচ্ছে। আর পাতাগুলো তো খুব কমল বলে তিনি মন্তব্য জুড়ে দেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার এবং বারোমাসিয়া চা বাগানের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক হক ইবাদুল বাংলানিউজকে বলেন, চা গাছের জন্য ছায়াতরু অত্যন্ত উপকারী। এরা লিগুমিনাস পরিবারের উদ্ভিদ। এই ছায়াবৃক্ষের শিকড়ে লডিউল (এক ধরনের গুটি) হয়। এ লডিউলে ব্যাকটেরিয়া থাকে। এ ব্যাকটেরিয়া বাতাস থেকে নাইট্রোজেন নেয়। ওই নাইট্রোজেনগুলো মাটি পায়। উদ্ভিদবিজ্ঞানের এই পদ্ধতির নাম মৃৎজীবিতা। এটি গেলো ছায়াবৃক্ষের মাটির নিচে কথা।
গাছের প্রজাতির কথা উল্লেখ করে এ চা গবেষক হক ইবাদুল বলেন, এখন বলছি, ছায়াবৃক্ষের ওপরের অংশের কথা। চা গাছের জন্য ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ছায়া দরকার। অবশিষ্ট ৪০ বা ৩০ শতাংশ সূর্যালোক প্রয়োজন। চা বাগানের জন্য যেসব ছায়াবৃক্ষ নির্বাচন করা হয় সেগুলো বৈজ্ঞানিক নাম হলো-আলবিজিয়া ল্যাবেক, আলবিজিয়া অডরেটিসিমা, আলবিজিয়া প্রসেরা, আলবিজিয়া সাইনেসিস, ডেরিস রোবাস্টা এবং ইন্ডিগোফেরা টেয়সম্যানিয়াই। আর বাংলা নামগুলো- হুডি, কনকচূঁড়া, কড়ই, শিরিষ প্রভৃতি। এসব ছায়াবৃক্ষ ‘সিম’ বা অঞ্চলিক ভাষায় ‘ওড়ি’ জাতীয় উদ্ভিদ। যত ধরনের সিম জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে এদের গোড়ায় লডিউল (এক ধরনের গুটি) এবং ব্যাকটেরিয়া থাকে। চা বাগানের সব ছায়াবৃক্ষ সিম জাতীয় উদ্ভিদ প্রজাতির। এদের পাতাগুলো হয় ছোট ছোট। এই ছোট ছোট পাতা ভেদ করে প্রায় ত্রিশভাগ সূর্যোলোক এসে চা গাছে পড়ে এবং অবশিষ্ট প্রায় ৭০ শতাংশ ছায়া চা গাছগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে বলে জানান অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার হক ইবাদুল।
ফিনলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) এবং অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বাংলানিউজকে বলেন, সেকশনের (চা বাগানের সুনির্দিষ্ট এলাকা) এনভায়রনমেন্টকে (পরিবেশ) কুল (ঠান্ডা) রাখার জন্য এবং নতুন কুঁড়িদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় আমরা সম্প্রতি বেশ কিছু সেডট্রি (ছায়াতরু) রোপণ করেছি। আর তাদের প্লাস্টিক-টুকরো দেয়ার অর্থ হলো গাছগুলোকে মার্ক (চিহ্নিত) করে রাখার জন্য। যে জায়গাতে ছায়াবৃক্ষ ছিল না সেখানে গাছগুলো নতুন করে রোপণ করা হয়েছে। এতে করে ওই এলাকার চায়ের গড় উৎপাদন বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৯
বিবিবি/এএটি