গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় খুলনায় বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় শোকদিবস পালনের দোয়া অনুষ্ঠান এবং দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা করে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন।
এদিন সকালে শোকর্যালি নগরের নিউ মার্কেট থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বেতার খুলনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টে শাহাদতবরণকারী তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সব বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা র্যালিতে অংশ নেন।
শোকদিবস উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও আদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
আলোচনা-সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, কেএমপির পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হাবিুবল হক খান, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবীর এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। স্বাগত জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ইকবাল হোসেন। পরে রচনা, চিত্রাঙ্কন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিজীয়দের মধ্যে পুরস্কার এবং ঋণের চেক বিতরণ করা হয়।
এদিন সকালে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ ও নাত এবং মিলাদ-মাহফিল ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর অটিস্টিক শিশুদের জন্য দিনব্যাপী প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন এবং মাসব্যাপী শোকাবহ আগস্ট শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শন করে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস (পিআইডি) শোকর্যালিতে অংশ নেয় এবং পরে অফিসে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে শোকর্যালি, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং নিজস্ব মিলনায়তনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শোকদিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করা হয়েছে। সকাল ৯টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে কালোব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে কোরআনখানী, সকাল সোয়া ৯টায় শোকর্যালি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, ডিনরা, রেজিস্ট্রার, ডিসিপ্লিন প্রধান, প্রভোস্ট, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক (চলতি দায়িত্ব), শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা।
খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) জাতীয় শোকদিবস যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলর বাসভবন ও হলগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা কর বিভাগের আয়োজনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কর অঞ্চল-খুলনার কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায়।
খুলনা প্রেসক্লাব দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বেলা ১১টায় ক্লাবের অভ্যন্তরে অবস্থিত জাতির জনকের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং এরপর ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম হাবিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
এমআরএম/ওএইচ/