ঢাকা, রবিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কে হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার, বিলম্বের যত কারণ

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
কে হচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার, বিলম্বের যত কারণ উপরের বাম দিক থেকে- শফিকুল ইসলাম, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান, শাহাব উদ্দীন কোরেশী ও মনিরুল ইসলাম, ছবি: বাংলানিউজ ফাইল ফটো

ঢাকা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে রেকর্ড সময় দায়িত্ব পালন করেছেন মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এ পদ থেকে প্রায় সাড়ে চার বছরের পাট চুকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। আছাদুজ্জামান মিয়ার উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, এ নিয়ে চলছিল গুঞ্জন। দীর্ঘ এ পথচলায় সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেব কষে নিজেও জানিয়েছিলেন বিদায়ের কথা। এর মধ্যেই ডিএমপি কমিশনার পদে আরও এক মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়াকে। ফলে নতুন নগর পুলিশ প্রধান নিয়োগে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা বেড়েছে।

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও আছাদুজ্জামান মিয়াকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা শোনা গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অনেকটা সঙ্গত কারণেই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আছাদুজ্জামান মিয়াকে এক মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগস্ট বাঙালির শোকের মাস। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ছাড়াও এ মাসেই (১৭ আগস্ট) দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা এবং ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ঘৃণ্য গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এর মধ্যে আবার ১২ আগস্ট দেশজুড়ে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইসঙ্গে ২৩ আগস্ট পালিত হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী।

এর মধ্যেই সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তান ও পল্টনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালানো হয়। এরপর খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকায় সড়ক থেকে দু’টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় ভারী একে-২২ অস্ত্রসহ বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং গ্রেফতার জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ মাসের অন্য সময়ে নাশকতার আশঙ্কা করছিল গোয়েন্দারা। এ পরিস্থিতিতে আপাতত নগর পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে, প্রয়োজনের স্বার্থেই ডিএমপি কমিশনারকে আরও এক মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

১৩ আগস্ট চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস ৮ আগস্ট আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডিএমপিতে পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৬৮০ দিন দায়িত্ব পালন করেছি। আজই আমার পুলিশে সর্বশেষ কর্মদিবস। আগামী দিনে এভাবে এই পোশাকে আর দেখা হবে না। হয়তো অন্য কোথাও অন্য কোন পোশাকে দেখা হবে। সবচেয়ে বেশি মিস করবো আমার এই পবিত্র পোশাকটিকে।

চাকরির মেয়াদের শেষ দিন ১৩ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে আছাদুজ্জামান মিয়াকে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে এক মাসের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামানের অবসরোত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে ১৪ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অথবা যোগদানের তারিখ থেকে এক মাস মেয়াদে ডিএমপির কমিশনার পদে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলো।

এদিকে, নতুন ডিএমপি কমিশনারের নিয়োগ এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য দায়িত্ব পেতে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে গুঞ্জন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা জানান, নতুন নিয়োগ পেতে যাওয়া ব্যক্তির বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী নিজে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।

অনেক সিনিয়র অফিসারই আলোচনায় রয়েছেন। তবে পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় এ পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে যে কেউ এ দায়িত্ব পেতে পারেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, ডিএমপি কমিশনার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গারর বাসিন্দা শফিকুল ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। ডিপার্টমেন্টে ‘ক্লিন ইমেজের’ অফিসার হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। বিএনপি শাসনামলে তাকে দেশের দুর্গম এলাকায় ‘শাস্তিমূলক’ বদলি দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপির (চলতি) দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও রয়েছেন এ আলোচনায়। গত ১৬ মে তাকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির পদ থেকে পুলিশ সদরদপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপির চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়। তিনি বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালে পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। কর্মে সফলতার ছাপ রাখা পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে আইজিপিসহ অন্যদের ‘সুনজরে’ রয়েছেন।

এছাড়া ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি) মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসানের নামও শোনা যাচ্ছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেওয়া মারুফ হাসান ইতোপূর্বে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইতোপূর্বে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শাহাব উদ্দীন কোরেশীও রয়েছেন আলোচনায়। তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে পদোন্নতি পাওয়ার পর পুলিশ সদরদপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ ও উন্নয়ন) হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।

সিনিয়র চার কর্মকর্তাকে নিয়ে আলোচনার মধ্যেও এ পদে বড় চমক থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে অনেকে। তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক কর্মকর্তার বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে; যিনি ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পেলে, সেটি হবে চমক।

তিনি হচ্ছেন, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। সেক্ষেত্রে তাকে ‘ভারপ্রাপ্ত কমিশনার’ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ১৫তম বিসিএসের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ঠাণ্ডা মাথায় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা রাখেন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা পরবর্তী সময়ে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার টিমের সফলতা উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা আগস্ট ১৯, ২০১৯
পিএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।