ঢাকা, শনিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আগুনে সব পুড়ে ছাই, তবু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
আগুনে সব পুড়ে ছাই, তবু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শহীদ খলিফা তার পোড়া ঘর দেখাচ্ছেন। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: স্বপ্ন ও আশা নিয়েই তো মানুষ বাঁচে। স্বপ্নহীন মানুষ মৃতপ্রায়। অপরদিকে স্বপ্নবান মানুষেরা শত প্রতিকূলতার মাঝেও সংগ্রাম করে দুনিয়ায় বেঁচে থাকে। তেমনি এক সংগ্রামী ও স্বপ্নবান রিকশাচালক শহীদ খলিফা।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরের চলন্তিকা মোড় সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তিতে রিকশাচালক শহীদ খলিফাকে পোড়া ঘরের মেঝেতে বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট জিনিসপত্র খুঁজতে দেখা যায়।

শহীদ খলিফার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ার চরের।

তবে, তিনি ৪২ বছর ধরে এই বস্তিতেই বসবাস করে আসছিলেন। তিনি পেশায় রিকশাচালক ও মাঝেমধ্যে গ্যাসের চুলা মেরামতের কাজ করেন। স্ত্রী, দু’ছেলে, ছেলের বউ দু’মেয়ে এবং নাতি-নাতনি নিয়ে ওই বস্তিতে চারটি রুম ভাড়া করে বসবাস করতেন। আগুনের তার চারটি ঘরের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  

তার দু’মেয়ে কাজল ও রেখার বিয়ের জন্য অনেক কষ্টে আট আনা স্বর্ণের কানের দুল এবং ছয় আনা স্বর্ণের চেইন বানিয়ে রেখেছিলেন। ঘরের মধ্যে আরও ছিল টেলিভিশন-রেফ্রিজারেটরসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। আগুনের গ্রাস থেকে একটা সুতাও তিনি বাঁচাতে পারেনি।

শহীদ খলিফা বাংলানিউজকে বলেন, সারা জীবনের যা কিছু আয় করেছি। তা দিয়ে একটু একটু করে সংসার সাজিয়েছি । সবকিছুই আগুনে কেড়ে নিলো। তবে, আগুনে পরিবারের সদস্যদের কোন ক্ষতি হয়নি। আগুন শহীদ খলিফা সবকিছু কেড়ে নিতে পারলেও স্বপ্ন, আশা এবং মানসিক শক্তিটুকু কেড়ে নিতে পারেনি। তিনি আশাবাদী আবারও পরিশ্রম করবেন, শরীর যেহেতু সুস্থ আছে এসব জিনিস নতুন করে গড়তে একটু সময় লাগলেও অসম্ভব হবে না।

যেখানে বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় ঘর পোড়া মানুষগুলো আহাজারি আর কান্নাকাটিই একমাত্র সম্বল, সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা গেলো এই শহীদ খলিফাকে। জীবনের চরম বাস্তবতায় এবং হতাশার মাঝে তার মানসিক শক্তি এবং আশার কথা হতাশায় নিমজ্জিত যেকোনো মানুষের জন্য উদাহরণ হতে পারে।

এর আগে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। টানা ৩ ঘণ্টা ধরে ২৪টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত সাড়ে ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। তবে, পুরোপুরি নেভাতে নেভাতে বেজে যায় রাত দেড়টা। এর সঙ্গে পুড়ে যায় তিন হাজার পরিবারের স্বপ্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।