প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২৬ আগস্ট) তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আমাদের যে উড়োজাহাজ ব্যবস্থাপনা তা আন্তর্জাতিক অনেকগুলো সংস্থার বিভিন্ন কনভেনশন ও প্রটোকলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
‘আমরা মন্ট্রিল কনভেনশন সিগরেটরি কিন্তু বিষয়টি আইনে পরিণত করা হয়নি। তাই যাত্রীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনের মধ্যে মোটামুটিভাবে মন্ট্রিল কনভেনশনের প্রভিশনগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। ’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের মূল ফোকাসটা হচ্ছে উড়োজাহাজযোগে যাত্রী, ব্যাগেজ ও কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে যদি যাত্রীর মৃত্যু হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয়, ব্যাগেজ প্রাপ্তিতে বিলম্ব হয় বা হারিয়ে যায় বা ক্ষয়ক্ষতি হয়; কার্গো প্রাপ্তিতে বিলম্ব, হারানো বা ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে এই আইনের মাধ্যমে আমরা প্রতিকার পেতে পারি।
তিনি বলেন, নেপালে বাংলাদেশের পরিচালনার এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার একটা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়েছিল। তারা যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে তা খুবই সামান্য, এটা কনভেনশনের আওতায় হলে অনেকগুণ; কমপক্ষে জনপ্রতি এক কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো পেতেন। কিন্তু ১২ হাজার ডলারের মতো পেয়েছেন।
‘এই পরিবর্তনটা আসবে আমরা যদি বাংলাদেশে আইনটি চালু করি। ’
আকাশপথে যাত্রী-ব্যাগেজ এবং কার্গো পরিবহনের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলোর দায়-দায়িত্ব খসড়া আইনে সুস্পষ্ট করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, আঘাতে যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ এক লাখ এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস বা আইএমএফের নিজস্ব মুদ্রা), যা এক লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। এটি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নির্ধারিত।
মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে দুই লাখ ৫০ হাজার ফ্রাঙ্ক (এক ফ্রাঙ্ক সমান ৯০০ সহস্রাংশ বিশুদ্ধতার সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রাম স্বর্ণের মূল্য)। মোটামুটি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের সাড়ে ৬৫ মিলিগ্রামের মূল্যমান হচ্ছে এক ফ্রাঙ্ক। এটা দুই লাখ ৫০ হাজার দিয়ে গুণ দিয়ে যা হয় তা পাবে।
এছাড়া ব্যাগেজের ক্ষেত্রে আগে প্রতি কেজি ছিল ২৫ ডলার, এখন তা ৭০ ডলার করা হচ্ছে। কার্গোর ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ২৫ ডলারের পরিবর্তে হচ্ছে ২৭ ডলার।
এসব ক্ষতিপূরণ এয়ারলাইন্সকে দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ক্ষতিপূরণ পেতে এয়ারলাইন্সকে যাত্রীদের ইন্স্যুরেন্স করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তারা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেবে।
কোনো ব্যক্তি আইন বা আইনের অধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধানের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অপরাধ হবে এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাত্রীর মৃত্যু হলে এয়ারলাইন্সগুলো যদি ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ না দেয় তবে তাদের উপর এই জরিমানাটা আরোপ করা হবে।
দেশি-বিদেশি যত এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে চলাচল করবে তারা এই আইনের আওতায় আসবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
‘আকাশপথে পরিবহন আইন’টির ফলে উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়বে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভাড়ার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটা যাত্রীকে সুরক্ষিত করার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস