ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শহীদ মিনার ভেঙে বাবার ‍ম্যুরাল বানালেন এমপি ফিরোজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
শহীদ মিনার ভেঙে বাবার ‍ম্যুরাল বানালেন এমপি ফিরোজ

পাবনা: পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শহীদ মিনার ভেঙে বাবার ম্যুরাল তৈরি করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির। এনিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কলেজ পরিচালনা কমিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে জায়গা নির্ধারণ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের নিজ অর্থায়নে ম্যুরালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। শহীদ মিনারটি জীর্ণ দশায় ছিল।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই কলেজ মাঠের দক্ষিণ পাশে বড় পরিসরে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এমপি ফিরোজ কবিরের বাবা মরহুম তফিজ উদ্দিন আহমেদ সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি কলেজটিতে বিভিন্ন সময় সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাই তার স্মৃতি রক্ষার্থে ম্যুরালটি তৈরি করা হচ্ছে।  

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো স্থানে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার ভেঙে ব্যক্তি বিশেষের ম্যুরাল তৈরি করা চরম নিন্দনীয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার অসৎ উদ্দেশেই এই কাজটি করেছে। যা সরাসরি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি আঘাত করে।

সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছেদ বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, শহীদ মিনারের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই, যেকোনো জায়গায় স্থাপন করা যায়। মসজিদ ভেঙেও নতুন স্থাপনা তৈরি করা হয়, তাহলে শহীদ মিনার ভেঙে ম্যুরাল নির্মাণে সমস্যা কোথায়। তবে নুতন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কলেজের দক্ষিণ পাশের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। অচিরেই নতুন করে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ হবে।  

পাবনার সুজানগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজিত দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর মার্চ মাসে কলেজের শহীদ মিনার ভাঙার কাজ শুরু হয়। শহীদ মিনার যেহেতু মাঠের দক্ষিণ পাশে হবে সেহেতু এমপি সাহেব সেখানে নিজ অর্থায়নে তার বাবা সাবেক সংসদ সদস্যের ম্যুরাল বানাচ্ছেন। তবে এ ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ম্যুরাল নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আগে শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হবে পরে ম্যুরাল নির্মাণের কাজ হবে।

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে জানার পরে আমি ম্যুরাল নির্মাণের কাজ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছি এবং আজ থেকে নতুন শহীদ মিনারের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে আমি কর্মস্থলে যোগদানের পরে ওই কলেজটিতে গিয়েছিলাম শহীদ মিনারটি দুর্বল ছিল। তবে অবশ্যই আগে শহীদ মিনার পরে ম্যুরাল। তবে এটি মূলত নীতি নৈতিকতার বিষয়। আর পাবনা জেলায় যেহেতু শতভাগ শহীদ মিনার রয়েছে। সেখানে শহীদ মিনার ভেঙে ম্যুরাল নির্মাণের বিষয়টি ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি অবমাননার সামিল। আমরা এ কাজে কাউকে উৎসাহিত করতে পারি না।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।