ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

একটি গোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে: সুলতানা কামাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
একটি গোষ্ঠীর অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে: সুলতানা কামাল সেমিনার, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশের একটি গোষ্ঠীকে (ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি) জোর করেই দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ভূমির অধিকার, ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। আমরা মূলত ওই গোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু করার মাধ্যমে নিজেদের বিবেকের কাছে নিজেরাই উদ্বাস্তু হচ্ছি।

আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপম্যান্টসহ (এএলআরডি) ১৫টি সংগঠন আয়োজিত ‘আদিবাসি দিবস: বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

সুলতানা কামাল বলেন, ভাষার আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আন্দোলনের  সূত্রপাত।

এর পর পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একটি স্বাধীন দেশের দাবিতে যুদ্ধে অংশ নেন। তারা স্বপ্ন দেখেছিলো একটি সমতার রাষ্ট্রের, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা থাকবে। যেখানে কোনো ধর্মের-বর্ণের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এখন দেখি আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) গোষ্ঠীকে জোর করেই দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ভূমির অধিকার, ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপ্রতি নিজামুল হক বলেন, ভূমির সঙ্গে আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি) গোষ্ঠির সম্পর্ক চিরঞ্জীব। আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, কোনো আদিবাসীর দখল করা জমির মালিক তিনি নিজেই, রাষ্ট্র এসব জমির মালিকানা প্রথাকে যথাযথ সম্মান করবে। কিন্তু এখন বলতে দ্বিধা নেই দেশের আইনে যা আছে অনেক সময়ই এর যথাযথ প্রয়োগ করা যায় না। তবে আমাদের দেশে মুসলিম সংখ্যা বাড়ে কিন্তু আদিবাসীদের (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী) সংখ্যা কমে যাচ্ছে এর কারণ কি? আমাদের এ নিয়ে ভাবতে হবে, মনে রাখতে হবে এ দেশের মালিক আমরা সবাই। সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে আমাদের ৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে হবে।

সিনিয়র আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, শান্তি চুক্তির ২৫ বছর হতে চললো অথচ এখন এসেও প্রশ্ন জাগে সেই চুক্তির কি হলো। আমরা এখন আদিবাসী শব্দ ভুলে গিয়ে তাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে সম্বোধন করছি। এতে শ্রেণী বৈষম্য হচ্ছে। কাউকে ছোট বা বড় করে দেখার কিছু নেই, আমরা সবাই সমান। সবার অধিকার রক্ষা সরকারের দায়িত্ব।

আদিবাসী নেতা ভিক্টর লাকড়া বলেন, আমাদের প্রতিটি মানুষের নামের সঙ্গে বনের পশু-পাখির নাম যোগ করা আছে। আমরা বন ও এর পশু-পাখির সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে বসবাস করি। কিন্তু এখন বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বন উজাড় করা হচ্ছে, আমাদের জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। আমরা আদিবাসী অথচ আমাদের দখলদার বানানো হচ্ছে। আবার আমাদের নামে বাজেট হয়, সেখান থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু আমরা কেউ জানি না। আমাদের পরবাসির মতো বসবাস করতে হচ্ছে, আমাদের অধিকারকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।

আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও সঞ্জিব দ্রং। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মনশিং থান, ভারতি পুজুর প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
ইএআর/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।