এ চিত্র দেশের প্রধান বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজার হাজার মানুষ দেশের প্রধান ও পরিচয়বাহক এ বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করলেও বেহাল অবস্থা নজরে নেই কর্তৃপক্ষের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই এ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। এ দায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তো আছেই, সেই সঙ্গে নাগরিকেরও দায় কম নয়। সেজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। তাহলে যত্রতত্র ময়লা ফেলবে না যাত্রীরা। ময়লা জমেও থাকবে না।
উন্নত বিশ্ব তো বটেই, পাশের দেশের কলকাতা বিমানবন্দর ও ভুটানের বিমানবন্দর বেশ পরিচ্ছন্ন। আর সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি কিংবা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তো দক্ষিণ এশিয়ার বিস্ময়। যেমন পরিচ্ছন্ন তেমন নান্দনিক।
যোগাযোগ বিশ্বে একটি কথা চালু আছে যে, একটি বিমানবন্দরে পা রাখলেই সেই দেশ সম্বন্ধে ভালো ধারণা হয়ে যায়। তাহলে শাহজালালে নামলে একজন বিদেশির কী ধারণা হতে পারে সেটি অনুমেয়।
শাহজালাল বিমানবন্দরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের ক্যানোপি-২ চরম অপরিচ্ছন্ন। স্টিল দিয়ে ঘেরা পিলারের নিচে ফেলা পানের পিক। ফ্লোরের কোথাও চিপসের প্যাকেট, ব্যবহৃত টিস্যু ও সিগারেটের খোসা। বিমানবন্দরের ভেতরে বাম দিক দিয়ে লিফটে ওঠার সময় দেখা যায় যত্রতত্র ময়লা ও বিভিন্ন জিনিস অগোছালোভাবে পড়ে আছে। টয়লেটগুলোর অবস্থাও খারাপ। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, থাকে না টিস্যু। ফলে ঢুকলেই নাকে এসে লাগে দুর্গন্ধ। ময়লা ফেরার ডাস্টবিনগুলোর অবস্থাও করুণ। বিনের গায়েই এত ময়লা যে মানুষ তার ভেতরে ময়লা ফেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
বিমানবন্দরের কার পার্কিংয়ের সামনে ময়লা ও দুর্গন্ধময় পানি জমে থাকে সব সময়। ফলে বিদেশগামী ও দেশে আগমনকারী লোকজনকে নিতে আসা লোকজনকেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সামনে ও ৮ নম্বর গেটের রাস্তার পাশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা। দেখে মনে হবে, এটি যেন এয়ারপোর্ট নয়, ময়লার ভাগাড়। রাস্তার পাশে ময়লার স্তূপ জমে আছে।
বহুতল কার পার্কিং ভবনের ভেতরেও ময়লা-আবর্জনা সর্বত্র। সেখান থেকে টার্মিনালে যাওয়ার পথে ডানে-বাঁয়ে দেখা যাবে আবর্জনার স্তূপ, দেয়ালে কালিঝুলি।
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, যে অংশতে ময়লা, এটা ৫০ শতাংশের এক শতাংশ। বিশাল এ বিমানবন্দরের বাইরে কিছু ময়লা থাকতে পারে। তবে ভেতরে কোনো ময়লা-আবর্জনা নেই। কারণ ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে নিয়মিত ঘাস কাটাসহ সব পরিষ্কার করতে হয়। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে তারা আরও সচেষ্ট হবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান (পিএসসি) বাংলানিউজকে বলেন, সবার আগে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার। যেখানে সেখানে কিছু ফেলার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, এয়ারপোর্টের পরিচ্ছন্নতার কয়েকটি ধাপ আছে। ভেতরে অপারেশন পরিচালনা করার জন্য একটা ধাপ। আর বাইরে টার্মিনালের সামনের অংশ পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য প্রতি শিফটে আজন কর্মী কাজ করে। এছাড়াও আনসার সদস্যরাও কাজ করেন।
‘আপনি যে এলাকায় ময়লার কথা বলছেন, তা এয়ারপোর্টের ৫০ শতাংশের এক শতাংশ জায়গা। ঢাকা শহরে রাস্তাঘাটে মানুষ যেভাবে ময়লা ফেলে, এয়ারপোর্ট তার বাইরে নয়। সুতরাং, এটা পরিবর্তনের জন্য সর্বপ্রথম আমাদের মাইন্ড সেটআপ দরকার। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি মানুষ সচেতন হলেই কেবল শতভাগ পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব। ’
তিনি আরও বলেন, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত, যাতে কোথাও কোনো ময়লা না থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
টিএম/এএ