মৌসুমি এই ফল সংরক্ষণ করা গেলে এ থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পেয়ারা ব্যবসায়ীরা। তবে পেয়ারার ভালো ফলন হলেও এ বছর চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না ।
স্থানীয় পেয়ারা চাষি কৃষ্ণ কান্ত মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় পেয়ারার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে মণপ্রতি ৮ থেকে ৯শ’ টাকায় বিক্রি করলেও এখন মণপ্রতি বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ থেকে আড়াইশ টাকা দরে। গাছ থেকে পেয়ারা পাড়তে (সংগ্রহ করা) শ্রমিককে ৫/৬শ’ টাকা করে দৈনিক মজুরি দিতে হয়। আর একজন শ্রমিক দৈনিক ২/৩ মণ পেয়ারা সংগ্রহ করতে পারে। তাই পেয়ারার এখন যে দাম পাচ্ছি, তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরিও হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় আড়াইশ বছর আগে পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল নামে এক ব্যক্তি ভারতের গয়া থেকে একটি পেয়ারা গাছের চারা এনে পিরোজপুরের নেছারাবাদে রোপন করেন। যা স্থানীয়ভাবে গইয়া নামে পরিচিত। এই উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ করে আসছেন স্থানীয় চাষিরা। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি, কঠুরাকাঠি, আলতা, সৈয়দকাঠি, ইন্দ্রে ও পূর্ব জলাবাড়িসহ প্রায় ২৬টি গ্রামে পেয়ারা চাষ হয়। উপজেলার পেয়ারা বাগানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৬টিরও বেশি গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে ২ হাজারেরও বেশি পেয়ারা বাগান রযেছে। আর প্রায় সাড়ে ১২শ’ পরিবার এ পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাষিরা বাগান থেকে এসব কাঁচা-পাকা পেয়ারা সংগ্রহ করে বিক্রি করতে নৌকায় করে আনছেন স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে। উপজেলার পশ্চিম কুরিয়ানা, জিন্দাকাঠি, আটঘর, আদমকাঠি, ব্রাহ্মণকাঠি, আতা, কঠুরাকাঠি, ঝালকাঠি, মাদরা, ঝিনুহার বাজারে পেয়ারার ভাসমান হাট বসে। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বসা এসব হাটে পেয়ারা বেচাকেনা হয়। পাইকাররা স্থানীয় এসব বাজার থেকে পেয়ারা কিনে ট্রলার, লঞ্চ ও ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠান।
খুলনা থেকে পেয়ারা কিনতে আসা মো. জহিরুল ইসলাম নামে এক পেয়ারা ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, খুলনা অঞ্চলে থাই পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের পেয়ারার চাষ হলেও পিরোজপুরের আটঘর কুরিয়ানার পেয়ারার চাহিদা ভোক্তাদের কাছে খুবই বেশি।
স্থানীয় চাষি সঞ্জয় কুমার বাংলানিউজকে জানান, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পেয়ারার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই সরকারের কাছে স্থানীয় চাষিদের দাবি, দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে এটি একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেয়ারা সংরক্ষণ ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে এটি হতে পারে লাভজনক ব্যবসা। পেয়ার থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যদি উন্নত মানের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে কুড়িয়ানায় পেয়ারাভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে।
স্থানীয় চাষিরা জানান, এখন চলছে পেয়ারার মৌসুম। ফলন ভালো হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় পেয়ারা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তবে ঐতিহ্যবাহী এ মৌসুমি ফলের ন্যায্যমূল্য পাবে, এমনটাই প্রত্যাশা পেয়ারা চাষিদের। তাছাড়া এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশি ভালো নয়। কেননা, সড়কপথে এসব পেয়ারা বাগানে ক্রেতাদের আসা-যাওয়ার তেমন কোনো সু-ব্যবস্থা নেই। একমাত্র নৌপথেই এখানে আসতে হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু বাংলানিউজকে জানান, পেয়ারার মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানকার পেয়ারা বাগান দেখতে আসেন। তাই এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ সারা বছর ধরে এসব পেয়ারা যাতে সংরক্ষণ করে রাখা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা হয়েছে।
ইউএনও আরও জানান, এসব পেয়ারা বাজারে সড়কপথে যেতে সেখানকার রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করি আগামী ৬ মাসের মধ্যে সড়কপথে এসব পেয়ারা বাজারে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৯
এমএমএস