বুধবার (২৮ আগস্ট) বেতারের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট ছয়টি দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে কক্সবাজার বেতার শিল্পী সমন্বয় পরিষদ। পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক রায়হান উদ্দীন বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আরডি মাহফুজের কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি বেতারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বেতারের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ছয়টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা আরডি মাহফুজসহ এসব অনিয়মে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানাই।
শিল্পী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাট্যজন স্বপন ভট্ট্যাচার্য বলেন, বিষয়টি আমরা অানুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকেও জানিয়েছি। অনতিবিলম্বে আরডি মাহফুজসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলনে নামবেন শিল্পীরা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট ও দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে আরডি মাহফুজ বলেন, এতসব অনিয়মের বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে যেকোনো সমস্যার সমাধান আছে। এগুলো আমরা শিল্পীদের সঙ্গে বসে ঠিক করে নিতে চাই।
জানা যায়, গত দুই বছরে ভুয়া বিল-ভাউচারসহ একাধিক খাতে আরডি মাহফুজ অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। এসব কাজে তাকে সহায়তার জন্য অনুষ্ঠান বিভাগের ক্যাজুয়াল স্টাফ নিরুপা পাল এবং নিজস্ব শিল্পী- উপস্থাপক সানুচিং মার্মাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আরডির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গেলে বাংলানিউজের অনুসন্ধানেও একের পর এক ঘটনা বেরিয়ে আসে। জানা যায়, রাজস্ব খাতসহ কক্সবাজারে বেতারে ইউনিসেফের অর্থায়নে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য নির্মিত অনুষ্ঠানে অনিয়মের চিত্র।
মহাপরিচালকের কাছে লিখিত ওই অভিযোগে জানানো হয়, বাজেট পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজার বেতারের জন্য ইউনিসেফের সহযোগিতায় ‘সি ফোর ডি’ কর্মসূচির আওতায় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়কালে স্থানীয় জনগোষ্ঠী নিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণবাবদ ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৭ হাজার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ১ কোটি ১৮ লাখ ৮২ হাজার টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়।
অথচ চলতি বছরের ৮মাস পেরিয়ে গেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা হয়নি। শুধু তাই নয় এ প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বেগ্গুনরল্লাই, বেগ্গুন্নরল্লাই ফোন ইন, কৈশোরের কলরব, জীবনের জন্য, সংলাপ, উঠান বৈঠক, ফোন-ইন-প্রোগ্রাম (হোস্ট কমিউনিটি), রেডিও সেট ক্রয়, যাতায়াত, নিউজ রিপোর্টিংসহ অন্তত ২৫টি খাতে গত দুই বছরে দুই কোটি টাকারও বেশি অাত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রতি মাসে চারবার স্কুলভিত্তিক শ্রোতা ক্লাবের অনুষ্ঠান ‘কৈশোরের কলরব’ নির্মাণবাবদ ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ রাখা হলেও এতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় মাত্র পাঁচ হাজার করে টাকা। এই অনুষ্ঠান থেকেই গত সাত মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার অনিয়ম করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পরেশ কান্তি দে ও রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ছালামত উল্লাহ জানান, ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দের কথা তারা শুনেছেন, কিন্তু দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার করে টাকা ও নাস্তা।
ইউনিসেফের অর্থায়নে নির্মিত অন্যতম একটি অনুষ্ঠান ‘বেগ্গুনরলাই’। এর জন্য প্রতি অনুষ্ঠানবাবদ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা ও ‘বেগ্গুনরলাই ফোন-ইন’ অনুষ্ঠানের জন্য ১৪ হাজার করে টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে সপ্তাহে তিনদিন এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। কিন্তু শিল্পীদের অভিযোগ, বরাদ্দের অর্ধেক টাকাও তাদের দেওয়া হয় না।
এমনকি এ অনুষ্ঠানের আওতায় মাসে ১২ থেকে ১৪টি বুলেটিনের প্রতিটির জন্য এক হাজার টাকা করে সম্মানী বরাদ্দ থাকলেও নিয়মিত তা প্রদান করা হচ্ছে না। এভাবে শুধু এ দুটি অনুষ্ঠান থেকেই গত দুই বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকার অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানানো হয়।
এছাড়া বাজেট পরিকল্পনায় শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান মীনা কার্টুন, মীনা কার্টুন ফলোড, পাবলিক সার্ভিস এনাউন্সমেন্টসহ (পিএসএ) আরও বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অন্যম পাওয়া গেছে।
উপরের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঘোষক শামীম আকতার বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুই বছর ধরে বেগ্গুনরল্লাই অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করছি। এ খাতে দুই হাজার টাকা সম্মানী বরাদ্দের কথা শুনেছি, কিন্তু শুরু থেকেই আমাকে প্রতি অনুষ্ঠানের জন্য দেওয়া হয়েছে এক হাজার টাকা।
তিনি বলেন, প্রতি পিএসএবাবদ ৬ হাজার টাকা সম্মানী থাকলেও আমি ১৫ থেকে ২০টি পিএসএ রেকর্ডিং করেছি। কিন্তু এক টাকাও পাইনি।
এদিকে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে প্রকল্প ও রাজস্বখাত মিলে প্রায় ২০টি অনুষ্ঠান বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আরডির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ক্যাজুয়াল স্টাফ নিরূপা পালকে। অভিযোগে, নিরুপা পাল ও আরেক সহযোগী উপস্থাপক সানুচিং মার্মার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক মো. মাহফুজুল হক বাংলানিউজকে জানান, এতসব অনিয়মের বিষয়ে আমি অবগত নয়। তবে যেকোনো সমস্যার সমাধানও রয়েছে। এগুলো আমরা শিল্পীদের সঙ্গে বসে ঠিক করে নিতে
চাই।
নারী কেলেংকারীর বিষয়টি জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, কালকে বেতারে আসেন। সমস্যা থাকলে ঠিক করে নেব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৯
এসবি/এইচজে