রাজধানীর মিরপুর-৭ নম্বর সেকশনে পুড়ে যাওয়া চলন্তিকা বস্তির মোড়ে এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন তানজিলা আখতার। তার বাবার নাম সালাম, মায়ের নাম জয়নাব খাতুন।
গত ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের চলন্তিকা বস্তি। পুড়ে ছাই হওয়া শেষ আশ্রয়স্থলে অবশিষ্টের খোঁজে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী এখনও আগুনের ধ্বংসস্তূপ হাতড়ান। অনেকে সেগুলো থেকে পোড়া খাট, টিভি, হাঁড়ি, পাতিল, কাপড়-চোপড়, চুলা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সাজেদা ফাউন্ডেশন, কারিতাসসহ বেশ কিছু সংস্থা। টাকা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহায়তা দিয়েছে সংস্থাগুলো। এজন্য এক হাজার ২৯৭ জনের নাম ও তালিকা প্রকাশ করে বস্তির কাছাকাছি দেয়ালে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের নাম আছে তারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। আর তালিকায় যাদের নাম নেই তারা নতুন করে হতাশায় ভুগছেন। তাদের একজন তানজিলা আখতার।
তানজিলার বাবা পেশায় রিকশা চালক, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তানজিলা বলেন, ‘সবাই সবকিছু পাইছে, আমগো কেউ কিচ্ছু দেয়নি। দুইদিন দেয়ালের সব তালিকা দেহি, বাপ মায়ের নামতো দেহি না। ’
তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের ৬ হাজার ৭০০ টাকা করে নগদ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০ লিটারের একটি ঢাকনাসহ বালতি, মগ, গোসল করার দুইটা সাবান, কাপড় কাঁচার দুইটা সাবান, একটা নেল কাটার, একটা মশারি, ৮টা খাবার স্যালাইন, তিনটা ব্রাশ, একটা পেস্ট ও এক প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবার নানা কারণে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। অনেকে এখনও বস্তির পাশে দেওয়া তালিকা খুঁজছেন, যদি নিজের নাম পাওয়া যায়।
তবে যেসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ছবি তোলাসহ তথ্য নেওয়া হয়নি তাদের নাম তালিকায় নেই। এদের মধ্যে অনেকে হয়তো কর্মস্থলে ছিলেন, অনেকে আবার গ্রামের বাড়িতে।
সাহেরা খাতুন। স্বামী খোকন শেখ। জন্মস্থান খুলনার চিতলমারী। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তিতে সুখেই ছিলেন তারা। অথচ আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে তিল তিল করে গড়ে ওঠা স্বপ্ন। পায়ের ঘাম মাথায় ফেলে কেনা হয়েছিলো খাট, টিভি, ফ্রিজ, হাঁড়ি, পাতিলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। সবকিছুই এখন অতীত। মনের কষ্টে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন সাহেরা। এরমধ্যেই নামের তালিকাসহ ছবি তোলা হয়েছে। ফলে বঞ্চিত হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত সাহেরা খাতুনের পরিবার।
সাহেরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ছবি তুলতে পারিনি। গেছিলাম দ্যাশে। লিস্টে নামও নাই। ’
এনজিওগুলো আশ্বাস দিয়েছে যাদের নাম বাদ গেছে তাদের জন্য ফের আরো একটা তালিকা করা হবে। তবে অভিযোগ করার জন্য যেসব নম্বর দেওয়া আছে সবগুলোই প্রায় বন্ধ আছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা এসব নম্বরে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়ায় অনেকে এখন খোলা আকাশের নিচে রাতদিন পার করছেন। আগুনে যে ঘর পুড়ে গেছে তার পুনর্বাসন হবে কি? এই প্রশ্ন চলন্তিকায় অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো বস্তিবাসীদের। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরা এসেছেন। পুনর্বাসনের আশ্বাসও দিচ্ছেন। তাতেও ভরসা নেই বস্তিবাসীদের।
এদের মধ্যে একজন সুমন মাহমুদ (৩৫)। বাবা সাইফুল হোসেন। পুড়ে যাওয়া বস্তিতেই বেড়ে ওঠা সুমন বলেন, আমাদের একটাই দাবি, পুনর্বাসন চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যদি লাখো রোহিঙ্গাদের আবাসন দিতে পারেন, আমাদেরও পারবেন। এই বস্তিতেই আমরা বসবাস করতে চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৯
এমআইএম/জেডএস