সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
ভবনটির অন্যতম মালিক রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।
সোমবার দৈনিকটিতে ‘এমপি ফারুক চৌধুরীর বাবা রাজাকার ছিলেন, রাজশাহীর অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। আর এদিনই রফিকুল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর পক্ষ থেকে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময় হুমকি পেয়েছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
হামলার ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা থিম ওমর প্লাজার দোষী নিরাপত্তাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে ওই ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এসময় ওই ভবন থেকে সাংবাদিক রফিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় জড়িত পাঁচ নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করে।
এদিকে, আহত রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে রফিকুল ইসলাম মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় এ ঘটনায় মামলা করেন। এতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। হামলার পর আটক পাঁচজনকে দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ এরইমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে।
রফিকুল ইসলামের ওপর হামলার আসামিরা হলেন- থিম ওমর প্লাজার নিরাপত্তাকর্মী আবদুল হাকিম (৪৫), নাহিদ হাসান (২০), সনি (২০), জামাল হোসেন ওরফে মুন্না (২৫) এবং সাঈদ আলী (৩৪)। এদের কাছ থেকে সাংবাদিক রফিকুলের একটি মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেলের হেলমেট উদ্ধার করেছে শিরোইল ফাঁড়ি পুলিশ।
ঘটনার পর আহত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি তখন নিজের পরিচয় দিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। মূলত তখনই হাতে থাকা লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি তাকে পেটাতে শুরু করেন থিম ওমর প্লাজার ওই নিরাপত্তাকর্মীরা। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা রফিকুলকে ভবনের নিচতলার গ্যারেজের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা তাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেনি। পরে খবর পেয়ে সাংবাদিকরা গিয়ে রফিকুলকে উদ্ধার করেন। এ সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়।
মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন জানান, থিম ওমর প্লাজার ব্যবস্থাপক তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে, হামলায় জড়িত পাঁচ নিরাপত্তাকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাই আটকদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। আর হামলায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। হামলাটি পরিকল্পিত উল্লেখ করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আরইউজে।
আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ, সহ-সভাপতি শরীফ সুমন, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি, কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব, কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান টুকু এবং সামাদ খান ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, ফুটপাতে মোটরসাইকেল রাখায় ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীরা পরিকল্পিতভাবে একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালাবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আরইউজে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভবনটির অন্যতম মালিক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সম্প্রতি সাংবাদিক রফিকুল ইসলামসহ রাজশাহীর কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক এই এমপির বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার করে। সোমবারও কালের কণ্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আর এদিনই এমপির ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা সাংবাদিক রফিকুলের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালালো। এর পেছনে ফুটপাতে শুধু মোটরসাইকেল রাখা, নাকি অন্য কোনো কারণ জড়িত- তা খুঁজে বের করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি মোড়ে আরইউজে’র উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে রাজশাহীতে কর্মরত সব সাংবাদিকদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা।
এছাড়া সাংবাদিক রফিকুলের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি মামুন-অর-রশিদ, কার্যনির্বাহী সদস্য আনু মোস্তফা এবং জাবীদ অপু।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৯
এসএস/জেডএস