বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সে ৪টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র, আরও ১০ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং ১১টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধনকালে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমরা সরকারে আছি।
৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিভিন্ন সেক্টরের মতো বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আলো জ্বালানোর। মনে আছে আমরা তখন পেয়েছিলাম মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বলতে গেলে সব জায়গায় অন্ধকারাচ্ছন্ন।
তিনি বলেন, ৫ বছরে আমরা ১৬শ মেগাওয়াট থেকে ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াটে উন্নীত করে যাই। ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সময় বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ আমরা শুরু করে গিয়েছিলাম।
পরে বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ এ আমরা সরকারে আসতে পারলাম না। এর আগে আমরা অনেকগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রেখে গিয়েছিলাম। ২০০১ এ যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদেরও একটা লক্ষ্য ছিল কীভাবে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, স্বজনপ্রীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সেই দিকে তাদের দৃষ্টি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে কাজগুলো শুরু করে গিয়েছিলাম সেগুলোও তারা যদি সম্পন্ন করতো তাহলে আরও মানুষ আলো পেতো। ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা যখন ক্ষমতায় আসলাম তখন দেখলাম বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে সেটা ৩২শ মেগাওয়াটে নেমে গেছে।
মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য, প্রতি ঘরে ঘরে আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
গ্রিড লাইন, যেখানে গ্রিড লাইনে সম্ভব নয় সেখানে সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ যখন গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে যায় তখন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষ ঘরে বসে নিজেরাই অনেক কাজ করতে পারে। প্রত্যেকটা এলাকায় কিন্তু উন্নতি হয়। আমাদের লক্ষ্য শুধু রাজধানীকে উন্নত করা নয়। প্রতি গ্রামকে উন্নত করা।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ কিনছি। জলবিদ্যুতের জন্য আমরা ভারত, ভুটান, নেপাল প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে আমরা ভারতের কাছ থেকে ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা কিনছি।
বিদ্যুতের জন্য ভুটান ও নেপালে বিনিয়োগ করতে সরকারের চিন্তা-ভাবনা এবং এ নিয়ে চলমান আলোচনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয় আমরা দাম কিন্তু তত নেই না। এখানে কিন্তু ভুর্তকি দিতে হয়। সেজন্য অনুরোধ থাকবে যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হবেন। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ যেন না হয়। সাশ্রয়ী হলে বিলও কম উঠবে।
তিনি বলেন, যতটা খরচ হচ্ছে তার অর্ধেক দামে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। এভাবে ভুর্তকি দেওয়াটা কিন্তু ঠিক নয়, তারপরও মানুষের কল্যাণে, মানুষের সুবিধা চিন্তা করে আমরা করে যাচ্ছি।
২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে বিএনপি আমেরিকান কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, গ্যাস বিক্রির জন্য আমার উপর চাপ ছিল ২০০১ সালে, আমরা বলেছিলাম আমাদের কত চাহিদা আছে জানি না, সেটা আগে বের করে দেন। ৫০ বছরের রিজার্ভ রেখে তারপর আমরা বিক্রি করবো। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়ে গিয়েছিল। নেবে যুক্তরাষ্ট, কিনবে ভারত। যেজন্য ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
আমাদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস নেই এবং এলএনজি এনে চাহিদা মেটানো হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চাহিদা মোতাবেক গ্যাস নেই। এখন এলএনজি আমদানি করে চাহিদা মেটাচ্ছি। সঙ্গে আমরা গ্যাস অনুসন্ধান করছি। কূপ খনন করা হচ্ছে, কোথাও পাচ্ছি কোথাও পাচ্ছি না।
বাঘাবাড়ি ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শতভাগ বিদ্যুতায়িত নতুন ১০ উপজেলা হলো দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ, জয়পুরহাটের জয়পুরহাট সদর, আক্কেলপুর, পাঁচবিবি, রাজশাহীর পবা, নারায়ণগঞ্জ জেলার নারায়ণগঞ্জ সদর, রূপগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা।
এছাড়া নারায়নগঞ্জের গোদলাইলে লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল, মল্ডলপাড়া, দাপা (ফতুল্লা), নন্দলালপুর, রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে হসপিটাল/কলোনি, মুগদাপাড়া হসপিটাল, বনশ্রী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত ১১টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন এলাকা থেকে গণভবনে সংযুক্ত থাকা কর্মকর্তা ও উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
এমইউএম/এএ