ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীতে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার এক গৃহবধূ থানায় মামলা করতে গিয়ে রহিমা সুন্দরী (৪০) নামে এক নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। 

এ ঘটনায় সঞ্জু শিকদার (৩৫) ও নারী প্রতারক রহিমা সুন্দরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

সোনাগাজী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের চরগণেশ গ্রামের কলেজ রোডের মাঝি বাড়ির খোকন মিয়ার মালিকানাধীন রহিমা সুন্দরীর ভাড়া বাসায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে গণধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। এসময় দুর্বৃত্তরা তার সঙ্গে থাকা এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও একটি মোবাইল ফোন লুটে নেয়।  

পরে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে সঞ্জু শিকদার, রহিমা সুন্দরী ও আফলাছ হোসেনসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ, এলাকাবাসী এবং নির্যাতিত গৃহবধূর স্বজনরা জানান, আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিন ওই নারীকে দত্তক নিয়ে লালন-পালন করেন। উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারী গ্রামের রিপন নামে এক যুবলীগ কর্মীর কাছে ১৪ বছর আগে তাকে বিয়ে দেন সাহাব উদ্দিন। ৩ বছর আগে আধিপত্যের জের ধরে সন্ত্রাসীরা রিপনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে ওই নারী তার ১৩ বছর ও ৭ বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে পালক পিতার বাড়িতে আশয় নেন।  

নিঃসন্তান পালক পিতা ওই নারীর নামে বসতবাড়িতে জমি দান করার প্রস্তাব করেন। এ খবর জানাজানি হলে সাহাব উদ্দিনের ভাই ও ভাতিজারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর সাহাব উদ্দিন ও তার স্ত্রী রোশনা খাতুন এবং তাদের পালিত কন্যাকে পিটিয়ে আহত করেন সাহাব উদ্দিনের ভাই কালা মিয়া ও তার ছেলে মাসুদসহ কয়েকজন ।  

ওই নারী সেদিনই বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় চাচা, চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা যাতায়াত খরচ চাইলে দিতে পারেননি তিনি।

অভিযোগ দিয়ে নিরাশ হয়ে বের হওয়ার সময় থানার মাঠে ওই নারীর সঙ্গে পরিচিত হন প্রতারক রহিমা সুন্দরী। তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই নারীকে তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে বোন ডেকে জানান, পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এদিকে বাড়ির চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের ভয়ে ওই নারী পালক পিতার বাড়িতেও যেতে পারছিলেন না। থানা পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিল না।  

এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত ১২টার দিকে সঞ্জু শিকদার, আফলাছসহ ৫ জন যুবককে পুলিশের লোক বলে তার ওপর লেলিয়ে দেন রহিমা। ওই অসহায় নারীকে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সঙ্গে থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের রিং, ৮ আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় নির্যাতনকারীরা।  

সকালে জ্ঞান ফিরলে রহিমার কাছে এই নির্যাতনের কারণ জানতে চান সেই নারী। তখন সঞ্জু শিকদার ও আফলাছ নামের দুই যুবককে এনে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করান রহিমা। তারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করারও হুমকি দেন ওই নারীকে।  

ঘটনাটি জানাতে ওই নারী থানায় গেলে কর্তব্যরত একজন এএসআই প্রতারক রহিমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। খবর পেয়ে রহিমা সুন্দরী তাৎক্ষণিক থানায় এসে ওই নারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা নির্যাতিত নারীকে ধমক দিয়ে ঘটনাটি সামাজিকভাবে সমাধান করতে তাড়িয়ে দেন।  

ওই নারী সমাজের লোকদের জানালে কেউ দায়িত্ব না নেওয়ায় এক পর্যায়ে সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের দ্বারস্থ হন তিনি। তারা ঘটনার দু’দিন পর মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে সোনাগাজী মডেল থানার ওসির কাছে নিয়ে যান তাকে। বিষয়টি অবগত হয়ে ওসি তাৎক্ষণিক মামলাটি রুজু করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে সঞ্জু শিকদার ও রহিমা সুন্দরীকে আটক করে পুলিশ।  

সঞ্জু শিকদার দাগনভূঞা উপজেলার খোকন শিকদারের ছেলে। তিনি সোনাগাজী পৌরসভার চরগণেশ গ্রামের রেহানার বাড়িতে বসবাস করছিলেন। একসময় তিনি সোনাগাজী বাজারে মুচির কাজ করতেন। পরে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে যান। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। স্বামী পরিত্যক্তা রহিমা সুন্দরী চর দরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের কন্যা ও এক কন্যা সন্তানের জননী। তিন বছর ধরে সোনাগাজী মডেল থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় বুয়ার কাজ করছিলেন তিনি।  

সোনাগাজী কলেজ রোডের মাঝি বাড়ির খোকন মিয়ার মালিকানাধীন ভাড়া বাসায় থেকে বখাটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রবাসী ও ব্যবসায়ী যুবকদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতেন রহিমা। একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তার সখ্য থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতো না।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।