দখিনা স্রোত এখনই ছোবল মারছে শহর রক্ষা বাঁধে। পানি বাড়ার কারণে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের খোলাবোনা, পুরাতন কসবা ও বেলুয়ার চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, এবারের মৌসুমে বিলম্বিত বৃষ্টিপাত চলছে। আর আবহাওয়ার এমন আচরণ অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানি কখনও কখনও বাড়বে কখনও কমবে। তাই উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজশাহীর পদ্মানদীতে পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ মিটার। আর রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ১ দশমিক ১৪ মিটার নিচ দিয়ে রাজশাহীতে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও এ বছরে এটাই সর্বোচ্চ।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৯ মিটার। এরপর থেকেই পানি আবার কমতে থাকে। এনামুল হক আরও বলেন, গেলো ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মানদীর পানি বিপদসীমা (১৮ দশমিক ৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর পানি বাড়লেও আর এই রেকর্ড ভাঙেনি বলেও উল্লেখ করেন পাউবোর এই গেজ রিডার।
রোববার বিকেলে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে নদীতে স্রোত বইতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর থেকে নবগঙ্গা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় একটু একটু করে পানি শহররক্ষা বাঁধ ছুঁতে শুরু করেছে। পানি বাড়ায় বসুড়ি এলাকার মানুষ আবারও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। মহানগরীর জিয়ানগরে নদীপাড় থেকে প্রায় ৩শ মিটার উত্তরে নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। গত বছরের ভাঙনে পাড়ের কিছু অংশ পড়েছিল। আবার যে হারে পানি বাড়ছে তাতে সেখানকার কাজও বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নতুন করে পানি বাড়ায় হুমকির মুখে পড়েতে পারে মহানগরীর শ্রীরামপুরের টি-বাঁধ এলাকাও। ২০১৭ সালে ফাটল দেখা দেওয়ার পর জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছিল এই বাঁধের। গত বছরও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে এখানে। পানির প্রবাহ ও স্রোতের গতিবেগে দেখে এবারও সেখানে ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি হঠাৎ ১০ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর থেকে পানি আবার কমতে শুরু করে। ৭ জুলাই থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু করে। সবশেষ ২০ জুলাই পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা হয় ১৫ দশমিক ৮৬ মিটার। তারপর থেকে পানি একটু একটু করে কমতে শুরু করে।
এরপর আবারও আগস্টে বাড়ে। আবার কমতে শুরু করে আগস্টেই। কিন্তু বর্তমানে পদ্মায় পানির যেই প্রবাহ, তা দেখে ধারণা করা হচ্ছে পানি বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। পুরো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মার পানি কখনও বাড়বে আবার কখনও কমবে। বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা এখনও কম। আর পানি বাড়লেও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারবে না। টি-বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য তাদের আগাম প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
এসএস/এএটি