এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর)একইদিনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আপন বড়ুয়া, জিয়াউর রহমান সেলিম ও মো. ওসমান এবং এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর সুকুমার বড়ুয়া বুলু রামু থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন। এসব ডায়রিতে সবাই এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এদিকে এ বিষয় একইদিন রামু থানার অফিসিয়েল ফেসবুক আইডি `Ramu Thana Coxsbazar' থেকে ভুক্তভোগী ফেসবুক আইডিগুলোর মধ্যে সুকুমার বড়ুয়া, আপন বড়ুয়া, মো. ওসমান, অমিরণ বড়ুয়ার ফেসবুক আইডির স্ক্রিনশর্টসহ সতর্কতামূলক একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
রামুবাসীকে সর্তক করে এ পোস্টটিতে বলা হয়েছে, ফেসবুক আইডিগুলো হ্যাক করে এসব আইডি থেকে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য পোস্ট এবং বিভিন্ন মানুষের কাজ থেকে টাকা-পয়সা দাবি করা হচ্ছে। এসব আইডিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়স্বজনকে বিব্রত না হওয়ার অনুরোধ করা হলো। এছাড়াও এইসব হ্যাকারদের শনাক্ত করতে বাংলাদেশ পুলিশের ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিট’ কাজ করছে বলেও জানানো হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বাংলানিউজকে বলেন, রোববার একই দিনে এ বিষয়ে তিন-চারটি জিডি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার স্যারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। হ্যাকারদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে।
ভুক্তভোগী আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত রামুর ফতেখাঁরকুলের পূর্বমেরংলোয়া গ্রামের বাসিন্দা আপন বড়ুয়া বলেন, আমার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক করার পর হ্যাকারেরা আমার অনেক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা চেয়েছে। এবং ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে হ্যাকার নিজেই এই ০১৮৮০৭৯৮৬৫৮ নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ফোন করেন। নিজেকে হ্যাকার পরিচয় দিয়ে বলে, আপনার ফেসবুক আইডি আমরা হেকড করেছি। আপনার অনেক বন্ধুর কাছে আমরা টাকা চেয়েছি, কেউ টাকা দেননি। তাই এটি মুক্ত করতে চাইলে দু’হাজার হাজার টাকা বিকাশে পাঠান।
আপন বলেন, এরপর আমাকে এই বিকাশ (নম্বর-০১৮৬৯৯৩৪৩২১) পাঠানো হয়। এবং টাকা না দিলে বিভ্রান্তিকর স্যাটাস দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। টাকা না পেয়ে ঠিকই আমার ফেসবুক থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক একটি পোস্ট ছেড়ে দেয় হ্যাকারেরা। কিছুক্ষণের মধ্যে তা রিমুভ করে আবার আমাকে টাকার জন্য ফোন দেন তারা। সর্বশেষ রোববার রাতে আমার এক বন্ধুর স্ত্রীকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর একটি পোস্ট ছাড়ে তারা।
রামুর গর্জনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুকুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আমার বেশ ক’জন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় হ্যাকারেরা। আবার আমাকেও হ্যাকারেরা ০১৬২০৭৩৯২৩৭ এই নম্বর থেকে ফোন দেয়। ফোনে বলেছে, আপনার ভাই সুমন বড়ুয়ার আইডিও আমরা হ্যাক করেছি। এই আইডি ফিরে পেতে চাইলে বিকাশে ১ হাজার টাকা পাঠান। পরে এই বিকাশ নম্বর দেওয়া হয় (০১৮৬৯৯৩৪৩২১)।
ভুক্তভোগী জিয়াউর রহমান সেলিম জানান, আমার প্রথম আইডিটি হ্যাক করার পরে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আমি আরেকটি নতুন ফেসবুক আইডি খুলি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এটিও তারা (হ্যাকার) তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এবং এরাই আমাকে ফোন করে বলে আপনার নতুন আইডিও আমরা খেয়ে ফেলেছি। এবং টাকা না দিলে অশ্লীল পোস্টছাড়া হবে তখন বারোটা বাজবে। এরপর রোববার আমি থানায় জিডি করি।
ভুক্তভোগীরা জানান, যাদের আইডি হ্যাক করা হয়েছে, টাকা পাঠানোর জন্য এদের সবাইকে ০১৮৬৯৯৩৪৩২১ নম্বরটিই পাঠানো হয়েছে। এবং অনেকের সঙ্গে তারা চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলেছে। এতেই বোঝা যায়, সংঘবদ্ধ একটি চক্রই এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে। তাছাড়া এ চক্রটিকে রামু-কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজন জড়িত থাকতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রামু শাখার সভাপতি মাস্টার মো. আলম জানান, এভাবে ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার ঘটনা আসলেই উদ্বেগজনক। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকের এরকম একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতবড় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন, বিশেষ করে আইনশৃংখলা বাহিনীকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে রামু থানার অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে সচেতনতামূলক একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এবং এ বিষয়ে জেলা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিট’-এর সহযোগিতার কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯
এসবি/এসএইচ