ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

একসঙ্গে এত মরদেহ দেখেনি গ্রামবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
একসঙ্গে এত মরদেহ দেখেনি গ্রামবাসী একসঙ্গে এতো মরদেহ দেখেনি গ্রামবাসী। ছবি: বাংলানিউজ

সুনামগঞ্জ: বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে হতাহতের ঘটনায় যেন নিমিষেই সব স্তব্ধ হয়ে গেলো সবকিছু। এমন বিষাদের খবর শুনে বন্ধ করে দেওয়া হলো সেই বিয়ের অনুষ্ঠানও।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের কালিয়া কুঠা হাওরে নৌকাডুবিতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার চারশিশুর মরদেহ উদ্ধার করার পর বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাত একটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

পরে সকাল থেকে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। এ অভিযানে উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ আরও ছয়জনের মরদেহ।

নিহতদের স্বজনদের কান্নায় উপজেলার আশপাশের পরিবেশ যেন ভারী হয়ে উঠছে। এক সঙ্গে স্বজনদের এতো মৃত্যুর ঘটনা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাত থেকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে সবাই শুধু কান্না করছে। তাদের সান্তনা দেওয়ার মতো কেউ নেই।  

উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, এক সঙ্গে এতো মরদেহ আর কখনো দেখেনি এসব গ্রামের মানুষ।

উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহেদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কী আর বলবো। সবাই এক সঙ্গে যাচ্ছিলো বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করতে। কী হলো বুঝতে পারছি না। কী বলবো সবাই তো শুধু কাঁদছে। অবুঝ শিশু ও বৃদ্ধরা এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে কখনো ভাবিনি। একসঙ্গে এতো মরদেহ দেখেনি এ গ্রামবাসী।
একসঙ্গে এতো মরদেহ দেখেনি গ্রামবাসী।  ছবি: বাংলানিউজনিহতরা হলো- দিরাই উপজেলার চরনাচর ইউনিয়নের নোয়ারচর গ্রামের আবজল মিয়ার দুই ছেলে সোহান মিয়া (দেড় বছর) ও আসাদ (৫) এবং তার স্ত্রী আজিরুন (৩০), রফিনগর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের আরজ আলীর স্ত্রী রহিতুন নেছা (৩৫) ও তার মেয়ে তাছমিনা বেগম (১১), একই গ্রামের জাসদ মিয়ার মেয়ে শান্তা বেগম (৪), বাবুল মিয়ার ছেলে শামিম (২), বদরুল মিয়ার ছেলে আবির মিয়া (৩) ও চরনাচর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা নছিব উল্লাহর স্ত্রী করিমা বিবি ও একই গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে শহীদুল (৪)।

নিহদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে সবাইকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে, যেখানে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করেছে পরিবারটি। পরে এ বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ধার কাজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। দু’দিনে মোট ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

দিরাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও-ভারপ্রাপ্ত) বিশ্ববিৎ দেব বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ধার কাজ শেষ হয়েছে নিখোঁজ সবার মরদেহ পাওয়া গেছে। মরদেহ সবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত দিলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রফিনগরের ইউনিয়নের মাছিমপুর থেকে নৌকায় করে চরনার চর ইউনিয়নের পেরুয়া গ্রামে বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিল শিশুসহ ৩১ জন। নৌকাটি কালিয়া কুঠা হাওরে পৌঁছলে ঝড়ের কবলে পড়ে। এ সময় নৌকাটি উল্টে গেলে নৌকার সব যাত্রী পানিতে ডুবে যায়। অনেকেই সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও অনেকেই নিখোঁজ ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২১ জনকে উদ্ধার করে।

বাংলাদেশ  সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।