ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘ঘুষ দেওয়া জীবনের অংশ মনে করে ৭৫ শতাংশ মানুষ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
‘ঘুষ দেওয়া জীবনের অংশ মনে করে ৭৫ শতাংশ মানুষ’

ঢাকা: ঘুষ না দিলে সেবা পাবেন না, এমনটি মেনেই নিয়েছেন দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ। তাদের সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় সরকারি সনদ (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন) নিতে। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ মানুষ কোনো অভিযোগ ছাড়াই ঘুষ দেন। কারণ তারা মনেই করেন, ঘুষ দেওয়াটা জীবনের অংশ।

দেশে ঘুষের এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নানা সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছেন এমন ১৬ হাজার মানুষকে নিয়ে গবেষণাটি চালানো হয়। পরে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। গবেষণাটি উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী।

গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষই ঘুষ দেওয়াকে তাদের জীবনের একটা অংশ হিসেবে মনে করেন। বাকি ২৫ শতাংশ মানুষ অভিযোগ করলেও ইতিবাচক কোনো কিছু দেখেননি। তারা মনে করেন, অভিযোগ করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

গবেষণা মতে, লোকজনের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা সরাসরি ঘুষ চেয়েছেন। ৪০ শতাংশ কর্মকর্তা একটু গোপনে অর্থ দাবি করেছেন। আর বাকি ১০ শতাংশ কর্মকর্তা সেবা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অফিসের বাইরে গিয়ে অর্থ দাবি করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে যারা সেবা পেতে ঘুষ দেন তাদের ৬০ শতাংশ জানান, শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি কমানো যাবে না। আইন করলে হবে না, এর প্রয়োগ যথাযথ থাকা দরকার। আর ২০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, যারা শাস্তি দেবে তারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ১৫ শতাংশ মনে করেন, শাস্তির দেখা মিলবে না দুর্নীতির কারণে। আর ৫ শতাংশ মনে করেন, দুর্নীতি বিষয়ে শাস্তি দিতে গেলে ঝামেলা তৈরি হবে আরও বেশি। টিআইবির আলোচনাসভায় ঘুষের ওপর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।  ছবি: বাংলানিউজদুর্নীতির প্রতিকারের বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব দুর্নীতি কমাতে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন রাজনৈতিক পদক্ষেপের চেয়ে শক্তিশালী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন জানা ও এ আইনের প্রয়োগ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. অনন্য রায়হান প্রমুখ।

কমিশনগুলো অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের কর্মস্থলে পরিণত
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইন যথাযথ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি কমে আসবে। আমাদের দেশের তথ্য অধিকার আইন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, জার্মানিসহ আরও অনেক উন্নত রাষ্ট্র থেকে সমৃদ্ধ। বিশ্বের ১২৪টি দেশের র‌্যাংকিংয়ে ২৬তম।

‘কিন্তু আমাদের দেশের তথ্য অধিকার সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্নীতি বাড়ছে, জনগণেরর জানার অধিকার পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তথ্যের অবাধ প্রচারে সম্পতি বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য গণমাধ্যমে সব প্রকাশ হতে পারে না। পিএসসি, ইসি, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ সব কমিশনে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা জনগণের জানার অধিকারকে বাধার মুখে ফেলে দেয়। ’

সুজন সম্পাদক বদিউল বলম মজুমদার বলেন, আমাদের তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা তথ্য কমিশন। সেখানে তথ্য জ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দেশের মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতির তথ্য নিয়ে তালবাহানা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
ইএআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।