সূত্র জানায়, এই অভিযান আকস্মিক কোনো পদক্ষেপ নয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট নিয়ে এ অভিযান শুরু করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে সতর্ক করে আসছেন। দুর্নীতি-অপকর্মের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন, দুর্নীতির ব্যাপারে তার সরকারের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’। অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের সংশোধন বা সরে আসার জন্য তিনি সময়ও দিয়েছেন। বারবার সতর্ক করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় তিনি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রগুলো জানায়।
ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্তী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, এই অভিযান শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সারাদেশে এ অভিযান চলবে। অনেকে ব্যক্তি হিসেবে চুনোপুটি হলেও দুর্নীতিতে রাঘববোয়াল হয়ে গেছেন। অপরাধী যতো বড় আর ছোট হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়, সেখানে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। দুর্নীতি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও বলা হয় ইশতেহারে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইশতেহারের সেই ঘোষণার পর বারবার সতর্কতার বার্তা দিয়েই সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে।
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, যারা দুর্নীতি-অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরই অংশ হিসেবে অনৈতিক অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে বাদ দেওয়া হয়। এ দুই পদে দায়িত্ব দেওয়া আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। তাদের নেতৃত্বে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, ছাত্রলীগের পর যুবলীগকে ধরেছি, একে একে সব ধরবো।
এর মধ্যেই ক্যাসিনো কারবারে জড়িত থাকায় যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও আরেক যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারী জি কে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। গত মঙ্গলবারই (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সুত্রাপুরে আওয়ামী লীগের দুই নেতার বাসায় অভিযান চালায় র্যাব, সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও মোটা অংকের নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, এভাবে অভিযান অব্যাহত রেখে আওয়ামী লীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, যারা দুর্নীতি-অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। শুধু দলীয় বা রাজনৈতিক সংগঠনের লোকজনই নয়, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অভিযান রাজধানী শহর থেকে শুরু হয়েছে, সারাদেশেই চলবে। যেখানেই দুর্নীতি-অনিয়ম আছে সেখানেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার সবাইকে সতর্ক করেছেন। তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তাতে সমর্থন দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এসকে/এইচএ/