শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল রুমে সাংবাদিক স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আজকে যে আলোচনাসভা হচ্ছে এটি সুরক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে না হয়ে ইউনিয়ন অথবা জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে হতে পারতো।
‘আমি আশা করবো আমাদের নেতারা এসব বিষয়কে মূল্যায়ন করবেন। সামনের দিনগুলোতে ইউনিয়নের নেতারা আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন। ’
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের অবস্থানকে মর্যাদাপূ্র্ণ করার জন্যে অন্য পেশা থেকে আলাদা করে একটি আইন করেছিলেন। নিউজ পেপার এমপ্লয়িজ সার্ভিসেস কন্ডিশন অ্যাক্ট। যার অধীনে ওয়েজবোর্ড গঠন করা হতো ও রোয়েদাদ ঘোষণা করা হতো। দুঃখের বিষয় ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের শেষদিকে হঠাৎ করে একতরফাভাবে কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই এ আইনটি রদ করা হয়েছে।
‘সাংবাদিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তারপর থেকে ওয়েজ বোর্ডের জায়গায় শ্রম মজুরি বোর্ড হলো। আমরা এখন মজুরি বোর্ডের অধীনে আছি। অষ্টম ও নবম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আমরা দাবি জানিয়েছি, ১৯৭৪ সালের সেই আইনটিকে আবার যুগোপযোগী করে নতুন করে সাংবাদিকদের মর্যাদা; যা জাতির জনক দিয়েছিলেন। আজকের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার কাছে দাবি- তিনিও আমাদের সেই মর্যাদা আবার ফিরিয়ে দেবেন। গণমাধ্যমকর্মী আইনকে আবার নতুন করে পাস করিয়ে দিয়ে। ’
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান বলেন, ১৯৭৪ সালে শুধুমাত্র প্রিন্ট মিডিয়া থাকার কারণে তখন সেই আইনে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এবারের গণমাধ্যম কর্মী আইনে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি, প্রধানমন্ত্রী তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশও দিয়েছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আইনটি খসড়াও করে দিয়েছি, সেই আইনটিকে তারা আইন হিসেবে ঘোষণা করবেন। যেখানে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অবস্থানকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, সামনের দিনগুলোতে আমাদের অনেক আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন আছে। সেজন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্য। আমরা সাংবাদিকরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হতে পারি, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব যদি সাংবাদিকদের স্বার্থের পক্ষে কাজ না করতে পারে, তাহলে আমাদের স্বার্থ আমরা সংরক্ষণ করতে পারবো না।
‘আমাদের ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্য ছিল। কামাল লোহানী সাহেবরা যে ইউনিয়নের পতাকা দিয়ে গেছেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা সে পতাকা ঐক্যবদ্ধভাবে রাখতে পারিনি। আমাদের মাঝে আজকে রাজনৈতিক কারণে ইউনিয়নে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তারপরও আমি বলবো রাজনৈতিক কারণে ইউনিয়ন বিভক্ত হতে পারে কিন্তু সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে তো এই বিভক্তির কোনো কারণ নেই। আমরা এক সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার রক্ষার জন্য এগিয়ে যেতে পারি। যেটি আমরা এক সময় প্রমাণ করেছিলাম সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়েছিলাম। আজকে আমি মনে করি সেই ধরনের একটি ঐক্যর প্রয়োজন আছে। ’
তিনি বলেন, ওয়েজবোর্ডে যে অসংগতির কথাগুলো বলা হয়েছে, সে অসঙ্গতিগুলো দূর করার প্রয়োজন আছে। একটি কথা অবশ্যই মালিক কর্তৃপক্ষকে স্বীকার করতে হবে যে, সাংবাদিক ও কর্মীদের বাদ দিয়ে কোনো সংবাদপত্র বা কোনো ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়। তাই এখানে যারা শ্রম-মেধা দিচ্ছেন তাদের প্রত্যাশা তাদের অধিকার মর্যাদা অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। যদি না করতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে এই শিল্প অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। সেটি শুধুমাত্র এই শিল্পের জন্যই কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হবে তা নয়। আমাদের জাতীয় জীবনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ও সেই অসন্তোষের ছাপ পড়বে। তাই সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে আইন বাস্তবায়নের জন্য।
‘শ্রমিক-সাংবাদিকদের যে ন্যায্য দাবি আছে কর্তৃপক্ষকে সেগুলো পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকেও এই শিল্পে মালিকরা যেন ওয়েজবোর্ড এবং বেতনভাতা সুনির্দিষ্টাভাবে প্রদান করতে পারে সেজন্য প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে। এই প্রণোদনা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট উভয় মিডিয়ায় দিতে হবে। ’
সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিটিভির উপ-মহাপরিচালক অনুপ খাস্তগীর, বিএফইউজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকারিয়া কাজল, বিএফইউজের মহাসচিব সাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহলে হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সাংবাদিক আমান উদ্দৌলা, অমিয় ঘটক পুলক, আব্দুল হান্নান, রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এমএইচ/এমএ