ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজশাহী, বিপদসীমার কাছে পদ্মার পানি

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৯
বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজশাহী, বিপদসীমার কাছে পদ্মার পানি

রাজশাহী: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কখনও মুষলধারে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। থেমে থেমে বৃষ্টি চলছেই। যেন থামার কোনো নাম নেই। মেঘমেদুর আবহাওয়া আর টানা বর্ষণে তাই আশ্বিন যেন বর্ষার রূপ ধারণ করেছে।

গত নয়দিনে ১১৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। বলা হচ্ছে- এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

 

এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হু হু করে বাড়ছে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় সর্বশেষ রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপদসীমা নির্ধারিত রয়েছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৮ দশমিক ০১ মিটার। ফলে আগামী দুই এক দিনের মধ্যে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

এর ওপর সোমবার ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত। দেশটির গণমাধ্যমগুলো খবর দিচ্ছে- পানির তোড় সামলাতে ফরাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে ভারতের মুর্শিদাবাদ একাংশ ও বাংলাদেশে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গঙ্গা ছাড়াও মালদা জেলায় প্রায় সমস্ত নদীতে পানি বাড়ছে। উত্তর প্রদেশ ও বিহারে রেকর্ড বৃষ্টিতে উপচে পড়ছে বাঁধের পানি। ফলে ফরাক্কা বাঁধের সবকটি লকগেইট একসঙ্গে খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গার মতো রাজশাহীতেও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গত নয়দিনে ১১৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো রাজশাহীতে টানা বর্ষণ চলছে। তবে মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি কমতে পারে।

আর আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার (সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে) এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মায় পানি বাড়ছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৩৮ মিটার, ২৩ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৫১, ২৪ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৬১, ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৬৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৭৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৭৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৮৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৮৭ এবং সোমবার ১৮ দশমিক ০১ মিটার।

তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দুইবার। এরমধ্যে ২০০৪-২০১২ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০মিটার। এরপর পানি বাড়লেও আর এই রেকর্ড ভাঙেনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে বিপদসীমা অতিক্রম করতে আগামী ৩ অক্টোবর নাগাদ সময় লাগবে। এরমধ্যে আশ্বিনের বর্ষণ কমে গেলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তাই সেই সময় পর্যন্ত আগে অপেক্ষা করতে হবে।  

ফারাক্কা বাঁধ খোলার প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্ষায় তারা এমনিতেই বাঁধ খুলে রাখে। ফারাক্কার প্রধান ব্যারেজের সব লকগেইট খোলা আর বিহার ও উত্তর প্রদেশে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়ছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সৈয়দ সাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একদিনে ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করলেও এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। কারণ রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার। তাই পদ্মার পানি বাড়লেও বাঁধ নিয়ে মহানগরবাসীর এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
এসএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।