ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিপদসীমার কাছে থৈ থৈ করছে পদ্মা, হুমকিতে টি-বাঁধ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৯
বিপদসীমার কাছে থৈ থৈ করছে পদ্মা, হুমকিতে টি-বাঁধ

রাজশাহী: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আগে থেকেই হু হু করে পানি বেড়ে চলেছিল রাজশাহীর পদ্মায়। এরই মাঝে নতুন করে ফারাক্কার সবগুলো লকগেট খুলে দেওয়ায় পানিতে থৈ থৈ করছে এ নদী। পানির তোড়ে বর্তমানে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। সেই স্রোত আছড়ে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধে। এতে করে হুমকিতে পড়েছে টি-বাঁধসহ সংলগ্ন এলাকা।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে বাঁধ ঘিরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার সকালে বিপদসীমার মাত্র ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল রাজশাহীর পদ্মা।

এদিন বেলা ৩টায় রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা মাপা হয় ১৮ দশমিক ১৮ মিটার। অন্যদিকে নির্ধারিত বিপদসীমা হলো ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।  

এদিকে এরই মাঝে পাবনার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তবে রাজশাহীতে এই আশঙ্কা এখনও কম বলছে পাউবো। এজন্য আরও ৩-৪ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।  

এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব সতর্কতা হিসেবে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের সুরক্ষায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। টি-বাঁধ অংশে এরই মাঝে ৫শ' জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ লাইনের সামনের বাঁধ রক্ষায় ফেলা হচ্ছে আরও ২ হাজার জিও ব্যাগ।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, আজ সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মা প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই সময় রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা মাপা হয় ১৮ দশমিক ১৬ মিটার। পরে দুপুর ১২টায় তা বেড়ে ১৮ দশমিক ১৭ মিটার ও বেলা ৩টার দিকে ১৮ দশমিক ১৮ মিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ প্রতি তিন ঘণ্টায় নদীতে ১ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়েছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রাজশাহীতে পদ্মার পানির উচ্চতা দাঁড়াবে ১৮ দশমিক ১৯ মিটারে।

পরিসংখ্যানের সূত্রে এনামুল হক বলেন, গত ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি মাত্র দুইবার বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কেবলমাত্র ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এছাড়া আরেকবার ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটারে। এরপর পানি বাড়লেও ওইসব রেকর্ড ভাঙেনি।  

বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শাহিদুল আলম জানান, নদীর প্রবল স্রোতে কয়েক যুগ আগের টি-বাঁধটি কিছুটা দেবে গেছে। তাই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে তা রক্ষার চেষ্টা চলছে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট এ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জিও ব্যাগ ফেলে সে ফাটল ঠেকান।

তবে পদ্মার পানি বাড়া নিয়ে এখনই আতংকের কিছু নেই জানিয়ে এ প্রকৌশলী বলেন, নদীর পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলেও এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। রাজশাহীর পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে আরও ৩-৪ দিনের মতো লাগবে। আর বিপদসীমা অতিক্রম করলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার।  

এদিকে, বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের ১ হাজার ৮শ' পানিবন্দী পরিবারকে জেলা প্রশাসন ২০ কেজি করে চাল অনুদান দিয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে ৪৮৬ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আমিনুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
এসএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।