ঢাকা, বুধবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিতরণের অনুষ্ঠানে চাল বিক্রির পরামর্শ দিলেন এমপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৯
বিতরণের অনুষ্ঠানে চাল বিক্রির পরামর্শ দিলেন এমপি

টাঙ্গাইল: আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপন উপলক্ষে টাঙ্গাইলে ২০১টি পূজামণ্ডপে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত সাধারণ সহায়তার (জিআর) চাল বিতরণের অনুষ্ঠান হয়েছে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেলে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ১৪১টি মণ্ডপের প্রতিনিধির হাতে ডিও (চাহিদাপত্র) তুলে দেন টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন। বাকিদের বুধবার (২ অক্টোবর) বা আগামী ১০ দিনের মধ্যে ডিও নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

তবে এই চাল বিতরণের কথা থাকলেও বিক্রি করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ভাষ্য অনুযায়ী, বিতরণের জন্য বাজার থেকে ৪৩ টাকা প্রতিকেজি কেনা হলেও এ চালের দাম ১৯ টাকা ঠিক করে দিয়েছেন খোদ এমপিই।

এ নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এবং চাল বেচে দেওয়ার জায়গায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

মঙ্গলবার বিকেলে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জিআর চাল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এবার পূজা উপলক্ষে ভাল চাল দিয়েছেন। আপনারা প্রতিমণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল পাবেন। যে চাল আপনারা পাচ্ছেন এই চাল বাইরে কারও কাছে বেচতে গেলে ১৪-১৫ টাকা পাবেন বা এমন দাম বলবে। সেটা না করে এই চাল নিয়েও যেতে পারেন, আবার এখানে (বিতরণ অনুষ্ঠানে) পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি উদয় লাল গৌড় ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস রয়েছেন, তাদের কাছে আপনাদের চালের ডিও দিয়ে প্রতিকেজি চাল ১৯ টাকা করে বেচে দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে পারেন।

তার বক্তব্য শুনে পূজামণ্ডপের লোকজন ডিও সংগ্রহ করে উদযাপন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তাদের শ্রী শ্রী বড় কালিবাড়ীতে অপেক্ষা করতে বলা হয়।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বড় কালিবাড়ীর তৃতীয় তলা ভবনের নিচতলায় অপেক্ষা করছেন টাঙ্গাইল গোদি ঘরের (টিআর, কাবিখা, জিআর চাউল কেনার) এক প্রতিনিধি। তিনি একে একে সবার ডিও’র নিচে দুইটি স্বাক্ষর নিচ্ছেন, আর ৫০০ কেজি চাউলের দাম ৯ হাজার টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। যদিও এমপির ঠিক করে দেওয়া দাম অনুসারে ৫০০ কেজির দাম ১৯ টাকা করে পড়ে ৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এসময় এনায়েতপুরের পূজামণ্ডপের সভাপতি গৌতম অভিযোগ করেন, এমপি প্রতিকেজি চাউল ১৯ টাকা দরে বিক্রির জন্য বললেও এখানে এসে দেখি তারা গড়ে ৫০০ টাকা কম দিয়ে ৯ হাজার টাকা দিয়েছেন। তবু তিনি খুশি।  

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই টাকা বা চাল না নিয়ে পরে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা সংশ্লিষ্টরাই খেয়ে ফেলবেন। তার চেয়ে ভালো চাল অথবা টাকা নেওয়া।

অতুল নামের একজন বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে বাইরেও চাল বিক্রি করা যায় না। আর চাল বিক্রি করেও উপায় নেই, কারণ এই চাল নিতেও অনেক ঝামেলা, খেতেও ভাল হবে না। কারণ একই চাল বছরের পর বছর গোডাউনেই পড়ে থাকে সিন্ডিকেটের কারণে।  

তিনি বলেন, এই চাল তারা কিনে রাখলো। আর এই চালই সরকারের কাছে আগামীতে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করবে। সংশ্লিষ্টরা আবার এটা আমাদের জন্য বরাদ্দ দেবে। আবার তারা কিনে রাখবে। তাহলে এই চালের কিছু থাকবে?

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, বাইরে এই চাল ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। তার চেয়ে এমপি ১৯ টাকা দরে চাল বিক্রি করার কথা বলেছেন। এখানে আমরা গড়ে ৫০০ টাকা কম দিয়েছি।

কিন্তু সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, যে চাল পূজা উপলক্ষে বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো বাজার থেকে ৪৩ টাকা দরে কেনা হয়েছিল।

তাহলে এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন কেন চাল ১৯ টাকা কেজি দরে বেচে দিতে বললেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।