মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের জনপদে দেখা গেছে এ চিত্র।
বছরের পর বছর পদ্মার ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে বহু বছর আগে গড়ে উঠা পদ্মার চরাঞ্চলের জনপদ।
জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষার প্রথম দিকে পানি বাড়লে উপজেলার কাঁঠালবাড়ী, চরজানাজাত ও বন্দোরখোলা ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর পানি কমতে থাকলে কমে আসে পদ্মায় স্রোতের বেগ, সেই সঙ্গে ভাঙনও। তবে হঠাৎ করেই সপ্তাহখানেক ধরে পানি বৃদ্ধির ফলে ফের ভাঙন বেড়েছে চরের এসব এলাকায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, চলতি বছর শুধু বন্দোরখোলা ইউনিয়নেরই প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো অন্যের জমি বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে থাকছেন।
শুক্রবার ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে। অনেক পরিবারকে ঘরবাড়ি ভেঙে চর ছেড়ে মূল ভূ-খণ্ডে যেতে দেখা গেছে।
বন্দোরখোলা ইউনিয়নের কাজিরসূরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, যাদের ঘরবাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে তারা মূল ভূ-খণ্ড পাঁচ্চর, মাদবরেরচর এলাকার হাওলাদারকান্দি, শিকদারকান্দি, মালেরকান্দিসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষের ফসলি জমি ভাড়া করে ঘর তুলে থাকছেন।
এছাড়াও ভাঙন হুমকিতে থাকা অনেক পরিবারই আগে থেকেই জায়গা ভাড়া করে রেখেছে। অন্যরা চলে গেছে পদ্মার ওপার মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে।
কাজিরসূরা বাজারের মিষ্টির দোকানদার হারুন অর রশিদ জানান, চরের বেশিরভাগ ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোই এখন ভাড়া করা জায়গায় থাকছে।
নদীতে তার বাড়িও যেকোন সময় ভেঙে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় তিনিও চর ছেড়ে দূরের এক গ্রামে পাঁচ কাঠা জমি ভাড়া করে রেখেছেন। পাঁচ বছরের ভাড়া বাবদ ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ভাঙনের শিকার মানুষেরা কাঠা প্রতি ১ হাজার টাকা বছর চুক্তিতে ভাড়া নিচ্ছেন জমি। তবে কমপক্ষে পাঁচ বছরের টাকা অগ্রিম দিতে হচ্ছে জমির মালিককে। তাছাড়া ভাড়া করা জায়গায় অনেকটাই পরাধীন থাকতে হচ্ছে তাদের। গবাদি পশু পালনেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলো এক রকম মানবেতর জীবনযাপন শুরু করছেন।
পদ্মার ভাঙা-গড়ার খেলা বেশ প্রাচীন। পদ্মাবেষ্টিত শিবচরের চরাঞ্চল বহু আগে পদ্মার বুকেই জেগে ওঠে। দিনে দিনে জনবসতি হয়ে লোকালয়ে পরিণত হয় চরের বিরান ভূমি। উপযুক্ত হয় চাষাবাদের। বাড়তে থাকে বসবাস। ছোঁয়া পেতে থাকে আধুনিকতার। তবে গত দশ বছর ধরে চরাঞ্চলে পদ্মার ভাঙন বেড়েছে। দিন দিন বাড়ছেই। বিলীন হচ্ছে গ্রাম। ভূমিহীন হয়ে পড়ছে ভাঙনের শিকার পরিবার। তবে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপে নদী ভাঙন থেকে বাঁচবে এই চরাঞ্চল। এখনো এই প্রত্যাশা চরের মানুষের।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, শিবচরের বন্দোরখোলা ইউনিয়নের কাজিরসূরা এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে বড় ধরনের প্রকল্পের প্রয়োজন। আমরা সে ধরনেরই প্রকল্পের বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আপাতত এ বর্ষায় ভাঙন ঠেকানোর জন্য জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
আরএ