দু’দিন ধরে পদ্মার পানি বিপদসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় পানির প্রবাহ কমেছে ৫ সেন্টিমিটার।
হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে যেমন কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে জেলার বেশকিছু ইউনিয়ন। বিশেষ করে পাবনার সুজানগর এলাকাসহ জেলা নদী তীরবর্তী ১০টি ইউনিয়ন এ হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। আর এ নদী ভাঙন প্রতিরোধে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাবনা সদরের ভাড়ারা, হেমায়েপুর, দোগাছি ইউনিয়ন ও পাবনা সুজানগর উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, নাজিরগঞ্জ, মানিকহাট, সাগরকান্দি ইউনিয়ন পদ্মার ভাঙন হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। তবে এ ভাঙনের জন্য অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের জন্য গ্রামগুলো আজ নদী ভাঙনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া ঈশ্বরদী, সুজানগর ও পাবনা সদরের ভাড়ারা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও ত্রাণ হিসেবে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পাবনার জেলা প্রশাসক মো. কবির মাহামুদ বলেন, হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার পাঠিয়েছি। সুজানগর উপজেলায় বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য প্রত্যেক উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। বরাদ্দ আসার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।
পদ্মার পানির বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দু’দিনে পদ্মার পানি বিপদসীমার আট সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বর্তমানে পানি কমে বিপদসীমার তিন সেন্টিমিটারে নেমে এসেছে। আশা করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে। উজানের পানি আর আবহাওয়া ভালো থাকলে হঠাৎ পানি বাড়া এবং বন্যার কোনো সম্ভাবনা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন ভাঙনকবলিত এলাকাতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে জেলার যে শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে সেটি সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।
কৃষকের ক্ষতির বিষয় নিয়ে কথা হয় পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজহার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, হঠাৎ পানি বাড়ার কারণে পাবনা অঞ্চলের কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় সাত কোটি টাকা । ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির নানা প্রজাতির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে আধাপাকা ইরি ধান অনেক কৃষক ঘরে তুলতে পারেনি। কিছু পরিমাণ ধান কৃষক কাটতে পেরেছে। তবে সেটির বেশির ভাগ নষ্ট হয়েছে। আমরা সব কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক যাতে আবার ফসল রোপণ করতে পারেন, সেই বিষয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সরকারিভাবে তাদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে অবশ্যই তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। পদ্মায় পানি বাড়ার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ছয়টি ইউনিয়নের বেশকিছু নিম্নাঞ্চলের মানুষ। ডুবে গেছে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। পাবনা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পাবনায় পদ্মা নদীর পানি বাড়ার কারণে প্রায় ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে শীতের আগাম বিভিন্ন ধরনের সবজি ও উঠতি ইরি ধান। এত দ্রুত পানি বেড়েছে যে, কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারেনি বলে জানান স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। সরকারিভাবে আগাম বার্তা না পাওয়ার কারণে কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ কৃষকরা। তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহযোগিতার কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
সবমিলিয়ে পাবনা ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, রুপপুর, লক্ষ্মীকুণ্ড, সারাবাড়ি ইউনিয়নসহ পাবনা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের কমরপুর, চরসাদিপুর, চর আশুতোষপুর, চর সাদিরাজপুর, রানীনগর, পীরপুরসহ পদ্মার পানির নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় চরের ১০৫টি বসত বাড়ি। সবচাইতে বেশি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে পাবনা সদরের দোগাছি, ভাড়ারা ও ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি, রুপপুর, লক্ষ্মীকুণ্ড ও দোগাছি ইউনিয়নের পদ্মারপাড় সংলগ্ন বেশকিছু চর অঞ্চল।
এছাড়া জেলার বেশকিছু উপজেলা সুজানগর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুরে নিম্নাঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
আরবি/