এ দিন সকাল থেকেই ঢাক-ঢোল, কাঁসর ঘণ্টার শব্দ, ফুল-চন্দন আর আরতিতে মুখর হয়ে উঠে রাজধানীর প্রতিটি পূজামণ্ডপ। বেলা গড়াতেই প্রাঙ্গণ মুখরিত হয় শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে।
শনিবার (০৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কলাবাগান সার্বজনীন পূজামণ্ডপে অঞ্জলি দিতে এসে ফাল্গুণী রায় বাংলানিউজকে বলেন, মাতৃশক্তির প্রতীক দেবী দুর্গা। তার কাছে নারীর নিরাপত্তা আর অগ্রযাত্রা চেয়ে প্রার্থনা করেছি।
রাতে আগারগাঁওয়ের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের পূজামণ্ডপে কথা হয় শিক্ষার্থী মিতালী চক্রবর্তীর সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জগজ্জননীর উদ্দেশে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি। এই পূজা আমাদের সবার প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা এবং সমাজ ও জীবনকে মহৎ করতে শেখায়।
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে সপ্তমীর দিনে দেখা গেছে জাকজমকভাবে পালন করতে। শাস্ত্র অনুযায়ী এ দিন সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মধ্য দিয়ে সপ্তামাদি কল্পারম্ভ শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সপ্তমী লগ্নে নবপত্রিকা প্রবেশ একটি ‘প্রতীকী’ পূজা।
তিনি বলেন, ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। এ পূজায় কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তার কপালে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’।
হিন্দু বিশ্বাসে নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদকে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীক বিবেচনা করা হয়। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমোঃ’ মন্ত্রে পূজিতা হন।
রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়। এই আচারের মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কৃষি, খনিজ, বনজ, জলজ, প্রাণিজ ও ভূমি সম্পদ রক্ষার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন।
তিনি আরও বলেন, সপ্তমী তিথিতে মায়ের মহাস্নানে সমাজের সবচেয়ে উচুঁ তলার মাটি যেমন লাগে, ঠিক তেমনিভাবে সমাজের সবচেয়ে অচ্যুত স্থানটিওর মাটিও লাগে। মা এতে প্রমাণ করলেন, তার কাছে কেউ ছোট বা কেউ বড় নন। মায়ের সন্তানরা সবাই সমান। এ থেকে আমরা সমাজে সাম্য ও ভাতৃত্ব স্থাপনের শিক্ষা পাই।
শনিবার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, উৎসব উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে আরতি ও সংগীত প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিশেষ প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু মন্দিরের পাশে বসেছে ছোট আকারের মেলাও।
এ বছর সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৬টিসহ ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৭১টি মণ্ডপে পূজা হবে এবার।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ