মণ্ডপে ‘কুমারী মা’-এর আসন গ্রহণ করতেই ‘জয় কুমারী মা কি জয়, জয় মহামায়া কি জয়, জয় শ্রী শ্রী দুর্গা মা কি জয়’- ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠেছে রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির ও মঠ প্রাঙ্গণ৷ বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো লোকের ভিড়ে এমনই জয়ধ্বনি দিয়ে ভক্তরা ভক্তিভরে বরণ করে নেন ‘কুমারী’ মা প্রশংসা প্রিয়তা বন্দোপাধ্যায়কে। শাস্ত্র মতে, এদিন তার নামকরণ করা হয় ‘সুভগা’।
রোববার (৬ অক্টোবর) পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিনে রামকৃষ্ণ মিশনে এভাবেই অনুষ্ঠিত হয় পূজার সবচেয়ে আর্কষণীয় পর্ব কুমারীপূজা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করার উদ্দেশেই এ কুমারীপূজা। এদিন রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়াও মিশন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মঠেও কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভক্তদের অপেক্ষা শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মণ্ডপে আসেন ‘কুমারী মা’ প্রিয়তা৷ লাল টুকুটকে বেনারসি শাড়ি পরে আসা ‘কুমারী মা’র চোখে-মুখে ছিল কিছুটা ভীতি আর অনেকখানি আনন্দ। তার মুখশ্রী বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল তারই পেছনে অধিষ্ঠিত হওয়া দেবী দুর্গার সুকোমল মুখখানা। দেবী দুর্গা যেন ভর করছিলেন মিষ্টি মেয়েটির দেহে।
‘কুমারী মা’ আসনে আসার পরপরই শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই গঙ্গা জল ছিটিয়ে ‘কুমারী মা’- কে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর ‘কুমারী মা’র চরণযুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্র সজ্জিত ছিল গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। কুমারীপূজার ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বায়ু- এ পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মায়ের পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। পূজা শেষে প্রধান পুজারী দেবীর আরতি দেন এবং তাকে প্রণাম করেন। সবশেষে পূজার মন্ত্রপাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে সকাল ১০টার কিছু পরে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শাস্ত্র মতে, এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয়ে পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে। কুমারীপূজা অংশ নেওয়ার জন্য সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় জমতে থাকে রামকৃষ্ণ মিশনসহ এর আশপাশের এলাকায়। রামকৃষ্ণ মিশনের বড় চত্বর পেরিয়ে রাস্তাতেও ছিল ভক্তদের ভিড়। 'বেরসিক বৃষ্টি'ও তাদের সমাবেশে বাঁধা হতে পারেনি৷ পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে তাদের পদচারণায়৷
বিপুল সংখ্যক ভক্তদের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ র্যাব, পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
ডিএন/আরবি/