এদিকে, উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, এবার ২৯৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, গতবারের মত এবারও মিয়ানমার থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া উখিয়ার হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
পুরাণে আছে, অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। এ অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হয়েছে এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। পঞ্জিকা মতে, গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয়। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে ষষ্ঠী তিথির সূচনা ঘটে। তাই শুক্রবার সকালের মধ্যেই বেল গাছের নিচে পালন করা হয় বিল্ল ষষ্ঠী। সন্ধ্যায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খুলে যায় দুর্গার আয়ত চোখের পলক। জেগে ওঠেন দশভূজা। অসুরবধে চক্র, গদা, তীর, ধনুক, খড়গ-কৃপাণ-ত্রিশূল হাতে মাতৃরূপে অসুরদলনী দেবী ওঠেন হেসে। মন্দিরে মন্দিরে পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজ আর বর্ণাঢ্য আলোকচ্ছটায় জেলার পূজামণ্ডপগুলো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) সপ্তমী তিথির পর রোববার (৬ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা, অষ্টমীর দিন দুপুর ২টা ২৭ মিনিট থেকে বিকেল ৩টা ১৪ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা। সোমবার (৭ অক্টোবর) মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ৯টায় পূজা সমার্পণ ও পরে দর্পণ বিসর্জন-শান্তিজল গ্রহণ।
রামু কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের পুরোহিত সুবীর ব্রাহ্মণ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এবার মা দুর্গা এসেছেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। যাবেনও ঘোড়ায়। এ কারণে ঝড় ঝাপটার আশঙ্কা আছে। তাই মা দুর্গার প্রতি এবার আমাদের বিশেষ প্রার্থনা থাকবে- প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায়।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ বাংলানিউজকে বলেন, এবারের পূজা হয়ে ওঠবে উৎসব মুখর, জাঁকজমকপূর্ণ ও অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসব। প্রতিটি পূজামণ্ডপকে আকর্ষণীয় সাজে সাজানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে পূজার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য জেলার ২৯৬টি পূজামণ্ডপে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আনসার ও পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাড়তি সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শুধুমাত্র সৈকত এলাকায় সাড়ে চারশ ফোর্স নিরাপত্তার কাজে মোতায়েন করা হবে। ওইদিন আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট প্রতিরোধে থাকবে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, জেলার সব পূজামণ্ডপের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গতবারের মত এবারও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উখিয়া হিন্দু শরণার্থী ক্যাম্পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজা সফলভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
এসবি/আরবি/