মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের চিত্র ছিল এ রকম। সিঁদুর খেলায় মেতে উঠতে নারীদের ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
সিঁদুর কিনে শেষবারের মত দেবী দুর্গাকে পূজা দিয়ে তার পা স্পর্শ করে সিঁদুরকে পবিত্র করা হয়। হিন্দু ধর্ম অনুসারে সে সিঁদুরটি আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। এ সিঁদুর নারীরা একজন আরেকজনকে পরিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং আনন্দে মেতে ওঠেন। মা বিদায় নেওয়ার আগে নারীদের এমনভাবেই আশীর্বাদ করে যান। বলছিলেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী। তিনি বলেন, আবারও এক বছর পর মা আসবেন আমাদের মাঝে। সে পর্যন্ত নারীরা এ আশীর্বাদ নিয়েই থাকবেন। আর সবার উদ্দেশ্যে শান্তি ও সমতার বাণী নিয়ে এসেছিলেন পৃথিবীতে, আবার মর্ত্যলোকে তার স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার আগেই তিনি বিবাহিত নারীদের আশীর্বাদ করেন। মাকে তার স্বামীর কাছে পুনরায় যেতে দেওয়ার আগে এটাই সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক পূজার অংশ। এর পরেই সবাই বিসর্জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠাননে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে খেলাটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত পাশাপাশি অবস্থিত প্রতিবেশী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি দেশ। এ বন্ধুত্বের হাত আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছে গেছে সর্বশেষ ভারতের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে। এতে আমরা আশা করতে পারি, দেশ দু’টির সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হবে। তাছাড়া এতবড় একটি ধর্মীয় উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
সিঁদুর খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাবেক সভাপতি দীপেন চ্যাটার্জি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াসহ মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির অন্য সদস্য ও সিঁদুর খেলায় মত্ত অসংখ্য নারীরা।
এ বিষয়ে সিঁদুর খেলতে আসা প্রিয়া সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মাকে বিদায় জানাতে ও মায়ের আশীর্বাদপুষ্ট সিঁদুর নিতে দশমীতে মন্দিরে এসেছি। আমি আমার স্বামী সন্তানদের নিয়েই এসেছি। সিঁদুর খেলাতে অংশগ্রহণ করেছি। যা সারা বছরের কাঙ্ক্ষিত একটি সময়। মায়ের আশীর্বাদপুষ্ট সিঁদুর আমার স্বামীর হাতেও পরেছি। এদিকে, ধর্মকে মূল পুঁজি না করে উৎসবকে মনে ধারণ করে ঢাকেরশরী মন্দিরে অনেক মুসলিম নারীদের উপস্থিত হতে এবং এই আনন্দে শামিল হতে দেখা গেছে। নাচে-গানে তারাও মেতে উঠেছিলেন সিঁদুর খেলায়।
তেমনই একজন নারী আতিয়া রহমান আন্নি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হিন্দু সংস্কৃতি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো সংস্কৃতি। দেশীয় সংস্কৃতির প্রতিটি পরতে পরতে এ ধর্মটির প্রভাব রয়েছে। আর সাম্প্রদায়িকতা বাদ দেওয়ার ভাষা আমাদের সবার মনের মধ্যে থাকলেও হয়তো বা বিভিন্ন সামাজিক কারণে তা করে উঠতে পারি না আমরা। আমি সবসময় চেষ্টা করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই আমিও সরকারি ছুটির দিনে নারীদের অত্যন্ত আনন্দদায়ক ধর্মীয় অনুষ্ঠান সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য এসেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৯
এমএএম/আরবি/