ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৯
ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি

পাথরঘাটার বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে: চলতি বছরের দ্বিতীয়বারের মতো ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইলিশের বংশ বিস্তারের লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এর আওতায় ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর (৮ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে শুরু হবে ২২ দিনের জন্য) পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

এর আগে, চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এর মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে আবারও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ছে জেলেরা।

পাথরঘাটার উপকূলীয় জেলেরা এক সময় পেটের দায়ে সরকারের এসব নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও গত কয়েক বছর ধরে ইলিশ সম্পদ রক্ষার্থে এবং ইলিশের বংশ বিস্তারের স্বার্থে জেলেরা মেনে নিলেও বরাবরের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞার সময় পার্শ্ববর্তী ভারতের জেলেরা দেশীয় জলসীমা অতিক্রম করে মাছ শিকারের বিরোধিতা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়।  

ইতোমধ্যেই গভীর সমুদ্র ও নদ-নদী থেকে ইলিশ ধরার ট্রলার ঘাটে ফিরে এসেছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) শেষ বাজার হওয়াতে এসব ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে, আবার অনেকেই মাছ বিক্রি করে হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করছেন।  

গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে অনেক জেলেরাই ক্ষোভ প্রকাশ করে নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখনো ভারতীয় অনেক ট্রলার বাংলাদেশি জলসীমায় মাছ ধরতে দেখেছে। ইলিশের এ প্রজনন মৌসুমে সমুদ্রসীমায় ভারতীয় ট্রলার যাতে ইলিশ ধরতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।  

বরগুনার পাথরঘাটায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) গিয়ে দেখা যায়, সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়া উপজেলার প্রায় সব এলাকার জেলেদের ট্রলার ঘাটে অবস্থান করেছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) কিছু জেলেরা সাগরে থাকলে তারাও সাগর থেকে ঘাটের উদ্দেশ্যে ফিরছেন। এ সময় জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, এ বছরের একেতো ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে।  

দেশের জলসীমায় ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় এলাকায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। এমন অভিযোগ তুলে বছরের পর বছর ধরে সরকারের কাছে এ গুলো বন্ধের দাবি উপকূলীয় মৎস্যজীবী ও মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক অংশ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয়নি।  

গভীর সমুদ্র থেকে ফিরে আসা মো. ইউসুফ মাঝি, আবদুল্লাহ, আ. রহিমসহ একাধিক মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ভারতীয় অসংখ্য ট্রলাকে মাছ শিকার করতে দেখা গেছে। আমরা শুধু দেখেই যাচ্ছি কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাইনা। মা ইলিশ রক্ষার্থে এবং ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির স্বার্থে আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবো আর ভারতীয় জেলেদের নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে নিয়ে যাবে এটা হয়না। আমরা সরকারের কাছে দাবি  জানাচ্ছি যে, শুধু নিষেধাজ্ঞার সময় কেন সব সময়ই ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশি জলসীমায় এসে মাছ শিকার করতে না পারে সে ব্যপারে সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।  

এ বিষয় বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সারা বছরই ভারতীয় ট্রলার দেশীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ইলিশের নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের ট্রলার সাগরে পাঠাচ্ছি না, কিন্তু ভারতের ট্রলার এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা অনেকবার আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছেও একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে অবহিত করেছি।  

বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি ও সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, আমরাতো সরকারের নির্দেশনা মেনে চলি, কিন্তু ভারতের জেলেরা তো আমাদের সম্পদ ধরে নিয়ে যায়। আমরা ইতোপূর্বে বহুবার আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বিগত বছরের ন্যায় এ বছর যাতে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতের জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারে এ ব্যাপারে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।