বরিশাল নগরের পোর্টরোডের একমাত্র বেসরকারি বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে যেমন ইলিশের দেখা মেলেনি, তেমন খুচরা বাজারগুলোতেও দেখা গেছে একই অবস্থা।
এদিকে ইলিশের অভাবে পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র অনেকটাই মাছশূন্য হয়ে পড়েছে, কিছু পোয়া, চিংড়ি ও ঘের বা চাষের মাছ ছাড়া তেমন কোনো মাছ এ বাজারে দেখা যায়নি।
অবতরণ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায়, কর্মব্যস্ত বাজারটি অনেকটাই নীরব সময় পার করছে। নেই স্বাভাবিক দিনের মতো ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়, শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। বরফকলগুলোও রয়েছে বন্ধ। শুধু কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী অবতরণ কেন্দ্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। আর কিছু শ্রমিক গুছিয়ে রাখছেন সাজি-ককসিটের প্যাকেট।
তবে বেশিরভাগ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের গদিতে বসে টেলিভিশন দেখতে দেখা গেছে। অনেককে আবার জড়ো হয়ে চায়ের দোকানকেন্দ্রিক আড্ডা দিতেও দেখা যায়। কিছু খুচরা ব্যবসায়ী অবতরণকেন্দ্রের মুখে পোয়া, চিংড়ি মাছ নিয়ে বিক্রির জন্য বসেন, কিন্তু সেখানেও নেই তেমন একটা ক্রেতাদের উপস্থিতি।
শ্রমিকরা বলছেন, অবতরণকেন্দ্রের বেশিরভাগ শ্রমিকই বিকল্প কোনো কাজ জানেন না, বা আশপাশে সব জায়গায় শ্রমিক নির্দিষ্ট থাকায় সেসব জায়গায় তাদের কাজ করার সুযোগও মিলছে না।
ধার-দেনায় জীবন পার করা এসব শ্রমিকদের দাবি জেলেদের মতো যেন সরকার তাদের কিছু একটা সহয়তা দেয় নিষেধাজ্ঞার এই সময়গুলোতে। যাতে মানবেতর জীবন-যাপন করতে না হয়।
অপরদিকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার এ সময়টাতে দেশি খাল-বিল ও চাষের কিছু মাছ বেচা-বিক্রি চলে অবতরণকেন্দ্রে।
তবে নিষেধাজ্ঞার পর যদি কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়া যায়, তাহলে অনেককেই আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বিগত সময়ে প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার পর বাজারে প্রচুর ইলিশের দেখা মিলেছে। যার ধারাবাহিকতা এবারও বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার বন্ধে আগাম যা যা করণীয় আমরা তার সবকিছুই করেছি। সকাল থেকে গোটা বরিশালজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নজরদারি ও আভিযানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সকালে নগরের পোর্টরোডে এক ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তার কাছে মজুদ থাকা ৪৬ কেজি ইলিশও জব্দ করা হয়েছে। এর বাইরে কোথাও তেমন কোনো ঘটনা ঘটেন। নদীগুলোও জেলেশূন্য রয়েছে।
তিনি আরও জানান, গোটা জেলার সব বরফকল বন্ধ রাখা হলেও একটি সচল রাখা হয়েছে। চাষ ও কিছু স্থানীয় মাছের জন্য এটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সিনিয়র সহাকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, ইলিশের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের এসময় ২০ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। সকাল থেকেই বিভাগের আওতাধীন নদী ও বাজারগুলোতে নজরদারি রাখা হয়েছে। তারপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ মাছ শিকার করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
বরিশাল জেলায় ৪৩ হাজার ৬৪৪ জন এবং বিভাগে ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩ জন জেলেকে নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৯
এমএস/এএ