সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব কথোপকথনের স্ক্রিনশট। তাতে দেখা যায়, ঘটনার আগের দিন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ) ১৬ ব্যাচকে দায়িত্ব দেন আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।
ফাঁস হওয়া আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহা ফাহাদের এক সহপাঠীকে মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করছেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?
৬ অক্টোবর রাতে পানিসম্পদ বিভাগের ১৬ ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনির ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ফাহাদকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালানোর পাশপাশি ব্যাপক মারধর করা হয় তাকে। পরে ফাহাদের অবস্থার অবনতি হলে উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল লেখেন, ‘মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে। ’
ফাহাদকে মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। সোমবার (৭ অক্টোবর) ভোরে ঘটনার বিষয়ে জানতে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ফাহাদকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। তার শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই।
তিনি বলেন, ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। প্রমাণ পাওয়ার পরে চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে, রাত ৩টার দিকে শুনি ফাহাদ মারা গেছে।
এদিকে, প্রথম প্রকাশিত সিসিটিভির ফুটেজে মূল অপরাধীরা বাদ পড়লেও নতুন প্রকাশিত সবাই চিহ্নিত হয়েছেন। সেখানে দেখা যায়, ফাহাদকে রাত ৮টা ১৩ মিনিটে ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতাকর্মীরা ডেকে দোতলায় নিয়ে যান। এরপরেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ) ও সদস্য মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ)।
দ্বিতীয় তলার ফুটেজে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ ও তানিম, তোহা, রাফাদ, মাজেদ, মনির, বিটু, বিল্লাহ, গালিব, মোয়াজ, ইফতি মোশাররফ সকাল, তানভীর, মিজান, জেমি, মোরশেদকে দেখা যায়। ৬ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের সময় ফাহাদের মরদেহ দ্বিতীয় ও নিচতলায় সিঁড়ির মাঝামাঝি রাখা হয়। এরপরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করেন। পরে হল প্রভোস্ট ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, বুয়েটের ডাক্তার ঘটনাস্থলে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৯
এসকেবি/একে