দেশের রাজনীতিক ও সাবেক ছাত্র নেতারা জানান, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল, ফ্যাসিবাদী শক্তি, জামায়াত-শিবিরের বিস্তারের ক্ষেত্র তৈরি হবে। রাজনীতির বিরুদ্ধেও এটা একটা চক্রান্ত।
নেতারা বলেন, সুস্থ ধারার রাজনীতির অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার। সঠিক ছাত্ররাজনীতির কারণে এ হত্যাকাণ্ড হয়নি। গৌরবোজ্জ্বল ছাত্ররাজনীতিকে নষ্ট করতে অতীতে সামরিক ও স্বৈরশাসন আমলের বিভিন্ন সময় ছাত্রদের মধ্যে অস্ত্র ও মাদক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবমিলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধই চলমান সমস্যার সমাধান না।
তাদের মতে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে মৌলিক, গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা। ফ্যাসিবাদ, দখলদারিত্ব, দুর্বৃত্তায়িত, লেজুরবৃত্তিমুক্ত ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ছাত্ররাজনীতিকে রেখেই প্রতিক্রিয়াশীল, দেশবিরোধী, সমাজবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করে সুস্থ ধারা ফিরে আনা সম্ভব।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি- এটা অযাচিত ও অবান্তর। এতে সমস্যার সমাধান হবে না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে দুর্বৃত্তায়ন, মৌলবাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তি বিস্তার লাভ করবে। অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। দলকানা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ডাকসুর সাবেক জিএস মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে অসুস্থতার চিকিৎসা দরকার। যারা ছাত্ররাজনীতি করে কেউ তাদের ওপর রাজনীতি চাপিয়ে দেয় না। আবার সরকার জোর করে কারও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। এটা আমাদের পার্টির রাজনৈতিক লাইনও না। কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে এটা তারা করতে পারে। যে ঘটনা ঘটেছে, এটা দুঃখজনক। এ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো শৈথিল্য দেখাননি, ভবিষ্যতেও দেখাবেন না। দূষিত পদার্থ দূর করাই সমস্যার সমাধান।
কমিউনিস্ট পর্টির (সিপিবি) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ফাহাদ হত্যাকাণ্ড সুস্থ ছাত্ররাজনীতির কারণে হয়নি। এটা হয়েছে আদর্শভিত্তিক সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতির অনুপস্থিতির কারণে। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নসহ আদর্শবাদী বাম ছাত্র সংগঠনগুলোকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। সরকার ও প্রশাসনের সামনে সেখানে বছরের পর বছর চলছে দুর্বৃত্তায়িত ও দূষিত কার্যক্রম। তারই পরিণতি ফাহাদ হত্যাকাণ্ড। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। তাহলে কী দেশপ্রেম বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর জাতীয় রাজনীতি বন্ধ করার কথা বলা হবে। সুশীল সমাজের কেউ কেউ বিরাজনীতিকরণের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কথা বলছেন। এ কথা আমরা সামরিক শাসনের সময়, ওয়ান ইলেভেনের সময় শুনেছি। ছাত্ররাজনীতি আর ফ্যাসিবাদ এক না। ফ্যাসিবাদ, দখলদারিত্ত, দুর্বৃত্তায়িত, লেজুরবৃত্তিমুক্ত ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে কালিমালিপ্ত করার জন্য অতীতে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ছাত্রদের মধ্যে অস্ত্র ও মাদক ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তারা জানতেন ছাত্রদের চরিত্র নষ্ট করতে পারলে, গৌরবের যে অবস্থান সেখান থেকে তারা বিচ্যুত হবেন। ক্ষমতাকে দখল করার জন্যই তারা এটা করেছিলেন।
‘জামায়াত-শিবির, মৌলবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল চক্র- গৌরবোজ্জ্বল ছাত্ররাজনীতিকে ভয় পায়। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা মানে তাদের সুবিধা করে দেওয়া, গণতন্ত্র হরণ করা। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি এরই অভিপ্রায়। ছাত্ররাজনীতি রেখেই প্রতিক্রিয়াশীল, দেশবিরোধী, সমাজবিরোধী শক্তি নির্মূল করতে হবে। তাহলেই ছাত্ররাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরে আসবে। ’
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিণ আখতার বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ সমস্যার সমাধান না। ছাত্ররাজনীতি থেকে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীকে বের করে দিতে হবে। কোনো মানুষের রাজনীতি করা মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশপ্রেমের আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম ছাত্ররাজনীতি। এই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ বাড়তে থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
এসকে/টিএ