শুক্রবার (১১ অক্টোবর) উপজেলার জংলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত সালিশি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্ররা পার্শ্ববর্তী বালশাবাড়ি গ্রামে হাজী আমিনুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র, তাদের অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধুপুর গ্রামের ওই পাঁচ স্কুলছাত্র কোচিংয়ে যেতো জংলীপুর এলাকায়। একই সময় বালশাবাড়ী এলাকায় কোচিং করতে যেতো জংলীপুর গ্রামের মনছুর রহমানের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও তার চাচা মুছার মেয়ে সাদিয়া খাতুনসহ দশম শ্রেণির আরও তিন শিক্ষার্থী। যাতায়াতের পথে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাদিয়ার বাবা মুছা বাদী হয়ে থানায় ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলছাত্র আজাহারকে আটক করে পুলিশ। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান আফসার আলী থানা থেকে সালিশি বৈঠকে মিমাংসার কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। চেয়ারম্যান আফসার আলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে অভিযুক্ত স্কুলছাত্রদের সমন পাঠিয়ে সালিশি বৈঠকে হাজির করান।
শুক্রবার জংলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান আফসার আলী। সালিশ শুরুর আগেই পাঁচ স্কুলছাত্রের চুলকাটার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যানসহ শালিসকারীগণ এবং তাৎক্ষণিক নাপিত ডেকে এনে তাদের মাথার চুল মুড়িয়ে দেওয়া হয়। সালিশি বৈঠকের রায়ে দ্বিতীয় দফায় তাদের ১০ বার কান ধরে উঠবস করানো হয় এবং শারীরিক শাস্তিও দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী রনি, আজাহার ও রানা বাংলানিউজকে জানায়, তরিকুল এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। সে প্রতিদিনই আমাদের ধাক্কা দেয়। এর প্রতিবাদ করলেই আমাদের সাথে তর্কবিতর্ক হয়। তরিকুলের চাচা সাদিয়ার বাবা এ ঘটনায় থানায় মিথ্যা ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করেন।
আজাহার আলীর বাবা আবু বক্কার সিদ্দিক ও রানার চাচা আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, সালিশি বৈঠকে প্রভাবশালী মজনু উল্লাপাড়া থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়। সেখানে আমাদের পক্ষের কাউকে কিছু বলতে দেওয়া হয়নি।
সালিশি বৈঠকে উপস্থিত মাতব্বর আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, সালিশ শুরুর আগেই ওই পাঁচছাত্রকে মাথা ন্যাড়া করা হয়। তারপর সালিশ শুরু হয়। বিচারে ১০ বার কান ধরে উঠবস করানো এবং শারীরিক শাস্তিও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ইভটিজিংয়ের অভিযোগকারী আবু মুছা বলেন, আমার মেয়ে সাদিয়া ও ভাতিজা তরিকুলসহ তিনজন বালশাবাড়ি এলাকায় কোচিং করতে যায়। যাওয়ার পথে ওইসব ছাত্ররা তাদের ধাক্কা দেয়। এজন্য থানায় অভিযোগ করি।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান কওশিক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আজাহার নামে এক ছেলেকে আটকের পরে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের জন্য সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠিয়েছিলাম।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে জানান, আটক আজাহারের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আনা হলেও এটা ইভটিজিং নয়। ছেলে-মেয়েরা কোচিংয়ে যাতায়াতের পথে মারামারি করেছিল। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়টি আমলে নেয়নি। বিষয়টি মিমাংসার জন্য চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আফসার আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি চুলকাটার নির্দেশ দেইনি। সালিশি বৈঠকে সবাই উপস্থিত ছিলেন। তখন ওই ছেলেদের চুলবড় দেখে তাদের কেটে আসতে বলা হয়।
সালিশ শেষে তাদের শারীরিক শাস্তির দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এটুকু সাজা না দিলে সামাজিক বিচার মিমাংসা হয় না।
উল্লাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এরকম অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এখনো কেউ আসেনি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা অমানবিক। এভাবে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেনা।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
এনটি