জানা যায়, জেলার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের সন্দেশ দিঘী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় খুললেন শিক্ষকরা। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর গত ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) হঠাৎ এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম উঠে আসায় শিক্ষকদের কার্যদিবস পালন করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বসেই সময় কাটাচ্ছেন। বিদ্যালয়টির ভবন বলতে তেমন কিছুই নেই। আছে মাত্র একটি ভাঙা টিনসেড ঘর। তবে বিদ্যালয়ের ভাঙা ঘরের অফিস কক্ষে ৩টি ব্রেঞ্চ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়টিতে ৭ জন স্টাফ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়নি। অথচ কাগজে কলমে ৭৩ জন শিক্ষার্থীর নাম দেখানো হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস রুম নেই, নেই কোনো শিক্ষার্থী। নীতিমালা ও শর্ত পূরণ না করেও সন্দেশ দিঘী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বিদ্যালয়ে গত ২০১০ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও গত ২০১১ থেকে ’১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৫ বছর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরবর্তীকালে ২০১৬ সালে কাগজে কলমে বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু হলে ওই বছরেই ওই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় ২ জন, ২০১৭ সালে ৫ ও ২০১৯ সালে মোট ৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার পর সব মিলিয়ে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও তার মধ্যে পাশ করে মাত্র ৯ জন শিক্ষার্থী। ফলে বিদ্যালয়টির পাশের হার ৩৬ শতাংশ যা এমপিওভুক্তির নীতিমালার মধ্যে পড়ে না বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে স্থানীয়দের দাবি এ বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি অযোগ্য।
সন্দেশ দিঘী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমতাজুল হক বাংলানিউজকে জানান, ২০ বছর ধরে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চালিয়ে আসছি কিন্তু আমাদের বেতন ভাতা ছিল না, আমরা এতোদিন বঞ্চিত ছিলাম। বিদ্যালয়ে ৭৩ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে আসছে।
অন্যদিকে এমপিওভুক্তির খবর পেয়ে বোদা উপজেলাধীন ঝলইশালাশিরি ইউনিয়নে নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ নামে রাতারাতি ধানক্ষেত সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে একটি কলেজের ভবন নির্মাণকাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এক রাতেই লাগানো হয়েছে কলেজের সাইনবোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, নতুন হাট-বাজারের হোসনাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি পতিত জমিতে হঠাৎ করে টাঙানো হয়েছে কলেজের সাইনবোর্ড এবং রাতেই কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। গত ২৩ অক্টোবর (বুধবার) এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে কর্তৃপক্ষ রাতারাতি শুরু করেন কলেজের ভবণ নির্মাণের কাজ। ইট গেঁথে ভবনের কাঠামো তৈরি করা হয়। রাতেই টাঙানো হয় কলেজের নাম সংবলিত একটি সাইনবোর্ড।
পঞ্চগড় বিসিকনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলজের অধ্যক্ষ দেলদার রহমান এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
রাতারাতি কলেজ স্থাপনের অভিযোগ অস্বীকার করে দেলদার রহমান বাংলানিউজকে জানান, এর আগে টিনশেড ঘরে পাঠদান চলতো। বর্তমানে ২ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করছে কলেজে। গত এইচএসসিতে কলজের মোট ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং পাশ করে ৫৮ জন।
পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায় সিংহ বাংলানিউজকে জানান, এমপিওভুক্তির বিষয়টিতে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। এসব বিষয়ে এমপি-মন্ত্রী ও সচিবরা ভালো জানেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৯
আরএ