ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সরকারি হিসাবে বুলবুলের আঘাতে নিহত ২, ক্ষতি ৫০০০ ঘরবাড়ির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
সরকারি হিসাবে বুলবুলের আঘাতে নিহত ২, ক্ষতি ৫০০০ ঘরবাড়ির সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সরকারি হিসাবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে দু’জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৩০ জন। এসময় চার থেকে পাঁচ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

রোববার (১০ নভেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এতথ্য জানান। এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৫ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকে ৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর ৮ তারিখে সাত নম্বর সতর্কতা সংকেত এবং ৯ তারিখে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়। আমরা সে অনুযায়ী সংকেত অনুসরণ ও ফলোআপ করেছি। ঝড়টি ভারতে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এখন তিন নম্বর সংকেত দেওয়া হয়েছে, দুইদিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে চারজনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, আমরা অফিসিয়ালি দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছি। নিহতরা হলেন খুলনার দাকোপ উপজেলার প্রমিলা মণ্ডল (৫২)। তিনি বিনা অনুমতিতে আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে বাড়িতে যাওয়ার পর রান্নাঘরে গাছচাপায় মারা গেছেন। আরেকজন পটুয়াখালী মাধবখালীর হামিদ কাজী (৬৫)। তিনিও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে মারা গেছেন। আর ঘূর্ণিঝড়ে ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন এবং চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ৪০ থেকে ৯০ কিলোমিটার ছিল জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, এটা আসলে খুবই কম। সিডর-আইলায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগে আমাদের স্থায়ী কার্যাদেশ (এসওডি) আছে, সেখানে নির্দেশনা দেওয়া আছে, দুর্যোগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সেই স্থান পরিদর্শন করতে হবে। আমরা সোমবার (১১ নভেম্বর) হেলিকপ্টারযোগে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করবো। এরপরও জেলা পর্যায় থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকে ক্ষয়িক্ষতি নিরুপণ এবং পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশনা দেবো।

কৃষির ক্ষতি নিয়ে তিনি বলেন, উপকূলের ১৪টি জেলার শুধু পটুয়াখালীতে কিছু আমন ধান আছে। আমনের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে, শীতের সবজির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষতি নিরুপণ করে তাদের পুনর্বাসন করবে।  

জেলাওয়ারী ক্ষয়ক্ষতির সবশেষ হিসাব তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরায় কাঁচা ঘরবাড়ি, খুলনায় গাছপালা, বাগেরহাটে কাঁচাঘর ও টিনের ঘর, ভোলার লালমোহনে পাঁচ-ছয়টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে কিছু ধানের জমির ক্ষতি হয়েছে। বরিশালে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া, বরগুনায় একটি স্কুলের চাল উড়ে গেছে, পটুয়াখালীতে ৮৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। ফেনী, পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্রগ্রামে জেলার ১৫ উপজেলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। খুলনা বিভাগে ক্ষতি হয়েছে। অন্য জেলায় ক্ষতিক্ষতি তেমনটা হয়নি।

এসময় সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জানান, যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব আসতে কমপক্ষে সাতদিন সময় লাগবে। জেলা প্রশাসকদের আনুমানিক হিসাবে চার থেকে পাঁচ হাজার কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের সরকারের উদ্যোগ সবচেয়ে সফল ছিল। ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সফল হয়েছিলাম। ৫ হাজার ৫৮৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জনকে সরিয়ে নিতে পেরেছি এবং সেখানে তাদের নিরাপত্তা, খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল টিম, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চার নম্বর সতর্ক সংকেত পাওয়ার পরই উপকূলীয় ১৪টি জেলায় ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার প্রত্যেক জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই সেগুলো জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে। সেখানে তারা ভালোভাবে থাকতে পেরেছে।

নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড ভালো কাজ করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুবলার চরে রাসমেলা বন্ধ করেছে, পটুয়াখালীতে আটকা পড়া ১০০ জেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন চর ও দ্বীপ থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে কাজ করেছে।

প্রতিকূল আবাহাওয়ার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের খবর পরিবেশন করায় সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সুবিধা হয়েছে জানিয়ে সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

এসময় এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ঝড় অনেক দুর্বল হয়ে আঘাত করায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।

আরও পড়ুন> ‘বুলবুল’র তাণ্ডবে তিন জেলায় ৪ জনের মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯ (আপডেট: ১৫৫৯)
এমআইএইচ/একে​

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।