সেদিনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কলেজটির দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীবও প্রাণ হারান। আহত হন আরো কয়েক শিক্ষার্থী।
প্রায় দেড় বছরের মাথায় সেই দুর্ঘটনার রায় হতে যাচ্ছে রোববার (০১ ডিসেম্বর)।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারানোর পর কথামত বাস চালানো ছেড়ে দিয়েছেন দিয়ার বাবা। এখন তিনি মহাখালী বাস টার্মিনালের পাশে চা-নাশতার দোকান দিয়েছেন। মেয়ের স্মৃতি ছিল যে বাড়িতে, সেই বাড়িতেও তিনি থাকতে পারেন না, তাই বাসাও বদল করেছেন। মেয়ের ছবি নিজের মোবাইলের ওয়ালে রেখে দিয়েছেন। মেয়েকে প্রতি মুহূর্তেই মনে পড়ে তার। মেয়ের পাশে থাকতে কবরও দিয়েছেন মহাখালী রহিম মেটাল মসজিদের পাশের কবরস্থানে। মেয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে দিয়ার স্কুলেই ছেলে রিয়াদুল ইসলামকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করেছেন জাহাঙ্গীর। আর আরেক মেয়ে রোকেয়া কানন রিয়া এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে।
আবেগাপ্লুত হয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মেয়ে বেঁচে থাকলে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠতো। এখন এমন জায়গায় গেলো আর কোনোদিন আইবো না। আমারে আর কোনোদিন সালাম দিবো না। ’
সম্প্রতি আলাপকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যে বাসের ড্রাইভার আমার মেয়েরে মারছে, ওরা ড্রাইভারগো মানসম্মান নষ্ট করছে। আপনি দেখেন যারা দক্ষ ও জ্যেষ্ঠ চালক, তারা বেশি দুর্ঘটনা ঘটায় না। কিছু পোলাপান বাস চালাইতে জানে না। হালকা যানের লাইসেন্স নিয়া ভারী যান চালায়, ওরাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটায়। ’
ঢাকার রাস্তায় এখনো শৃঙ্খলা আসেনি, এ নিয়ে আক্ষেপ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দিয়ার মৃত্যুর পর ছাত্ররা রাস্তায় নামলো, রিকশা, কার, বাস চলার আলাদা লেন করে দিলো। কতো আন্দোলন হইল, এখন আর তা নাই। অথচ এটা হইলে ঢাকায় দুর্ঘটনা কমে আসতো। ’
তার একটাই চাওয়া, সরকারের লোকেরা যেন ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালকের হাতে লাইসেন্স দেন। টাকা নিয়ে যেন সবার হাতে হাতে লাইসেন্স না দেওয়া হয়।
স্মৃতিকাতর জাহাঙ্গীর মেয়ের স্মৃতি খোঁজেন এখনো। তিনি বলেন, ‘মেয়ের
স্কুলে যাই। মেয়েটাকে যে জায়গায় বাসচাপা দিয়েছে সেখানে গিয়ে দাঁড়াই। বুকটা হাহাকার করে ওঠে। ’ জাহাঙ্গীর বলেন, আশা করি, ন্যায়বিচার হলে ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। মেয়ের আত্মাটা শান্তি পাবে, আমরাও শান্তি পাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
টিএম/জেডএস