তিনি বলেন, আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই যথেষ্ট বিবেচনা করেছেন এবং বিবেচনায় তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা যেহেতু আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, সেটা আমাদের মানতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, আদালত তার (খালেদা জিয়া) মেডিক্যাল রিপোর্ট বিবেচনা করেছেন এবং সর্বোচ্চ আদালত বিবেচনা শেষে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তার যে অবস্থা সেখানে জামিন দিয়ে তাকে অন্য কোথাও চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) যে চিকিৎসা হচ্ছে, সেটাই যথেষ্ট।
তিনি বলেন, আদালতের কাছে তারা জামিন চেয়েছিলেন, জামিনের দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ ডিসেম্বর আদালত বলেছিলেন একটি মেডিক্যাল রিপোর্ট তাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। সেই মেডিক্যাল রিপোর্ট উপস্থাপন করার পরে সেটা বিবেচনা করবেন। আমি যতোটুকু জেনেছি, আপিল বিভাগ এ মেডিক্যাল রিপোর্ট পড়েছেন এবং তারা তাদের বিবেচনায় দেখেছেন যে এখানে চিকিৎসা করা যায়, সেটা অবজারভেশনে আছে বলে আমি শুনেছি। জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন বিজ্ঞ আপিল বিভাগ। আমি মনে করি এ অবজারভেশন যেটা হয়েছে তার আলোকে খালেদা জিয়া চিকিৎসার ব্যাপারে বিএসএমএমইউর কিছু করণীয় থাকলে তারা নিশ্চয়ই তা করবে।
বিএনপি বলেছে আদালতে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, গত শুনানির প্রথম দিন আপনারা দেখেছেন তারা আদালত কক্ষে কী তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল। আমি তখন বলেছিলাম- যখনই এমন কিছু হয়, যেটা তাদের পক্ষে যায় না, তা যতো যুক্তিযুক্ত থাকুক এটা তারা (বিএনপি) অভ্যাসগতভাবে বলেন এটা ঠিক না। এক্ষেত্রে ছয়জন ডাক্তার পরীক্ষা করে তাদের মতামত দিয়েছেন বলে আমি শুনেছি। তারা (বিএনপি নেতা) কেউ ডাক্তার নন। আসল ডাক্তার যারা তারা যেহেতু প্রতিবেদন দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে সেটা সম্পর্কে সন্দেহ তারা করতে পারেন, আমি করি না।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের জবাবে আনিসুল হক বলেন, তাদের পছন্দমতো রিপোর্ট যেটি হবে না, সেটাই ভুল হবে। তাদের পছন্দমতো যদি অন্যায় কিছু হয়, সেটা সঠিক। তার ওপরে ভরসা করে কেউ সিদ্ধান্ত দেবে না। যে কাগজপত্র আছে সেটা দেখিয়ে উচ্চ আদালত নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং আমি যেহেতু আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, তাই মনে করি সর্বোচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটাই আমাকে মেনে নিতে হবে।
এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। তবে খালেদা জিয়া যদি সম্মতি দেন তাহলে তাকে বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সকালে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদনের ওপর এবং তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও জয়নুল আবেদীন।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে আপিল শুনানি শুরু হয়। এসময় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মেডিক্যাল বোর্ডের পাঠানো প্রতিবেদন আদালতের কাছে পেশ করেন। পরে এ প্রতিবেদনের ওপরে শুনানি শুরু করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
জিসিজি/আরবি/