ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঠাঁই হবে কি প্রতিবন্ধী রাহেলার!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
ঠাঁই হবে কি প্রতিবন্ধী রাহেলার! ঘর হারানোর চিন্তায় রাহেলা খাতুন। ছবি: বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: ৬৫ বছর বয়সি বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী রাহেলা খাতুনকে এলাকার মানুষ কালা নামেই চেনে। ছেলেসন্তান নাহিদকে নিয়েই সংসার তার। নাহিদ দিনমজুরের কাজ করেন আর রাহেলা মাঠে ছাগল চরান। ৪৫ বছর বয়সি নাহিদ মায়ের যত্ন নিতে আজও বিয়ে করেননি। স্বামী হারা প্রতিবন্ধী এই বৃদ্ধার ঠিকানাও হয়নি তার বাবার বাড়িতে।

প্রতিবন্ধী এবং অসহায় বলে জোটেনি বাবার সম্পত্তির ভাগও। সহোদররা বঞ্চিত করেছেন তাকে।

স্বামী ফজলু দু’সন্তানকে রেখে মারা যায় তাও ৩০-৩৫ বছর আগে। দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ির পাশেই ছোট কুঁড়েঘরে ছিলো রাহেলার সংসার। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিন শতক জমির ওপরে বসবাস করে আসছেন এই বৃদ্ধা।

স্থানীয়দের দাবি, জমির মূল মালিক ও শরিকরা কেউই নেই বাংলাদেশে। সে হিসাবে ভূমিহীন রাহেলার কুঁড়েটি ওই জমিতেই থেকে যায়।

রাহেলা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের সরকারপাড়ার বাসিন্দা মৃত ইয়াদ আলীর মেয়ে।

স্বামী মারা যাওয়ার পরে ভেঙে পড়েনি এই প্রতিবন্ধী নারী। ছেলেমেয়েকে নিয়ে দেখেছেন স্বপ্ন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে বড় করেছে সন্তাদের। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধীয় হওয়া সত্ত্বেও কপালে জুটেছিলো না প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। তবে, তিনি একবছর আগে পেয়েছেন প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। রাহেলার কুঁড়েঘর। বর্তমানে দিনমজুর ছেলের উপার্জন এবং মাঠে ছাগল চরিয়ে অভাব না মিটলেও ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলেন রাহেলা। কিন্তু হঠাৎ করেই ভেঙে পড়ে কুঁড়েঘরটি। দুইটি ছাগল একসঙ্গে বিক্রি করে কুঁড়েঘরটাকে মেরামত করতে চেয়েছিলেন তারা। শীত আসছে ভেবে ইট দিয়েই ঘর করার পরিকল্পনা করে। ইট এনে ঘর নির্মাণ করতে শুরু করতেই বাধা দেয় রাহেলার চাচাতো ভাই মোমিন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্যামল মালিথা, আহাদ মালিথা, সবুজ মালিথা ও বিপল মালিথা।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দাবি, ওই জমির মালিক এখন তারাই। তবে জমি মালিক পাঁচজন সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির নামে রয়েছে বলে জানা গেছে। দেশ বিভক্তের সময় তারা ভারতে চলে গিয়েছেন। এরপরে থেকেই জমি দখল করে রাখেন তারা।

এদিকে বাবার সম্পত্তির ভাগ চেয়ে ভয়ে তারা কারো কাছে যেতেও পারছেন না, বিচার ও চাইতে পারছেন না উচ্ছেদের ভয়ে।

রাহেলার ছেলে নাহিদ আলী বাংলানিউজকে জানান, আমার জন্মের আগে থেকে এখানে আমার মা বসবাস করে আসছে। আমরা গরিব তো তাই আমার মামারাও জমিজমা দেননি। ঘরটা ভেঙে গেছে। কিন্তু মোমিন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্যামল মালিথা, আহাদ মালিথা, সবুজ মালিথা ও বিপল মালিথারা আমাদের ঘর তুলতে দিচ্ছে না। তারা বলছেন এই জমির মালিক তারা। আমরা অসহায় বলে এলাকার নেতারা আমাদের পক্ষে নেই। এই জায়গা ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো? এই জমি না হলেও আমার মায়ের বাবার যে জমি আছে সেখানে আমার মায়ের অংশ টুকু পেলেও আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতাম।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, এই জমির মালিকরা ভারতে চলে গেছেন। এটা খাস জমি হিসাবে যে যেমন পেরেছে দখল করে আছে। এই প্রতিবন্ধী রাহেলার বসবাস করা জমি ওপরে স্থানীয় কয়েকজনের লোভ হয়েছে। তাই অসহায় এই বৃদ্ধার ঘর ভেঙে তুলে দিতে চাচ্ছে। এই শীতে ভাঙা ঘরে ছাগলসহ রাহেলা খুব কষ্ট করছে। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করেছি।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ বাংলানিউজকে জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয় একজন ব্যক্তি আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিষয়টি অবহিত করেছে। তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আমরা শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ওই জমি মাপ নেবো ও প্রতিবন্ধী রাহেলা খাতুনের জমির ন্যায্যহিস্যা নিশ্চিত করব।

এছাড়া মানবিক এ বিষয়টি যারা উপজেলা প্রশাসনের নজরে এনেছিলেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউএনও সোহেল মারুফ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।