ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২০১৯-এ ভোলায় ৩০ হত্যা, ১৪৫ ধর্ষণ

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
২০১৯-এ ভোলায় ৩০ হত্যা, ১৪৫ ধর্ষণ

ভোলা: নানা ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০১৯ সাল শেষ হলেও ভোলায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল ধর্ষণ ও হত্যা। অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত ছিল মানুষ। বিশেষ করে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক।

গত এক বছরে জেলায় ১৪৫টি ধর্ষণ এবং ৩০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঘটেছে শিশু ধর্ষণ।

জেলায় গণধর্ষণ ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

পুলিশের অভিযানে আসামি গ্রেফতার এবং আদালতে দোষীদের শাস্তি হলেও বছরজুড়ে আলোচিত হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা। জমি বিরোধসহ নানা কারণে ঘটেছে হত্যাকাণ্ড।

আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার দীর্ঘজট দেখা দিয়েছে। ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে পাঁচ হাজারের মত মামলা। যার মধ্যে ধর্ষণ মামলা অন্তত ২০০টি।

ভোলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে ১৪৫টি ধর্ষণ এবং ৩০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে পাঁচটি ধর্ষণ ও তিনটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছে পাঁচটি ধর্ষণ ও একটি হত্যা। মার্চ মাসে হতাকাণ্ড না থাকলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১০টি। এপ্রিল মাসে ২০টি ধর্ষণ ও পাঁচটি হত্যার ঘটনা ঘটে। মে মাসে ১৭ জনকে ধর্ষণ ও এক জনকে হত্যা করা হয়েছে। জুনে ১৫টি ধর্ষণ ও চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জুলাইয়ে ১৩টি ধর্ষণ ও চারটি হত্যা, আগস্টে সাতটি ধর্ষণ ও দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে ১৪টি ধর্ষণ ও দুটি হত্যা এবং অক্টোবর মাসে আটটি ধর্ষণ ও তিনটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নভেম্বর মাসে দুটি হত্যা ১২টি ধর্ষণ এবং ডিসেম্বর মাসে দুটি হত্যা ও পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
  
সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এপ্রিল মাসে। এক মাসেই ২০টি ধর্ষণ এবং পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভোলা সদর, চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলায়। ওই সব মামলায় বেশিরভাগ আসামি গ্রেফতারও হয়েছে।
বছরজুড়ে চাঞ্চল্যকর দু’টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ভোলা সদর এবং মনপুরা উপজেলায়। এর মধ্যে ঈদের আগের রাতে সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়নে এক শিশুকে ধর্ষণ করে তিন পাষণ্ড। ঘটনার পর ১৪ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ধর্ষণ মামলার দুই আসামি মঞ্জু ও আলামিন মারা যায়।

এছাড়াও ১৮ জানুয়ারি গভীর রাতে লালমোহন উপজেলার চরভুতা গ্রামে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় খালা ও ভাগ্নিকে। ১৯ এপ্রিল জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে টেঁটাবিদ্ধ করে বীরেন্দ্র নামে এক জনকে হত্যার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের তিন আত্মীয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২০ অক্টোবর ভোলার বোরাহনউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে জনতার সহিংসতায় চার জন নিহত হয়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা না হলেও অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

২৬ অক্টোবর ভোলার মনপুরায় ঘটে আরেক গণধর্ষণের ঘটনা। ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫ জন মিলে এক নারীকে নির্জন চরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
৬ অক্টোবর মনপুরার চরফৈজউদ্দিন গ্রামে এক ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে।  
 
ভোলা আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট কিরন তালুকদার জানান, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে পাঁচ হাজার মামলা। এর মধ্যে ধর্ষণ মামলা রয়েছে ২০০টি। আদালতে ৭৪টি মামলা বিচারধীন। আমরা সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি। তবে বিচারক স্বল্পতার কারণে কিছু কিছু মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে প্রেমঘটিত কারণে, যার বেশিরভাগই সাজানো মামলা।

এছাড়াও ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে, যা নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত ১৫টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আমরা সব মামলা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।